অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ আটটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
রবিবার সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর ‘যমুনা’ সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেবেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
অন্য দল ও সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, গণ অধিকার পরিষদ, নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলাম।
শনিবার সন্ধ্যার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বৈঠক করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সঙ্গে।
রাত পৌনে ৮টায় বিএনপির চার নেতার সঙ্গে শুরু হয় বৈঠক। এরপর জামায়াতের দুই নেতা এবং এনসিপির চার সদস্যের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসেন অধ্যাপক ইউনূস।
বৈঠক শেষে রাত সোয়া ১০টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, বৈঠকগুলো ‘খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ’ পরিবেশে হয়েছে এবং আলোচনার মূল বিষয় ছিল— আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, “সব রাজনৈতিক দল নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্মতি জানিয়েছে।”
বিএনপি নির্বাচন চায় ডিসেম্বরের মধ্যে। তবে জামায়াত মনে করছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ইউনূসের দেওয়া ‘ডিসেম্বর থেকে জুন’-এর টাইমলাইনে তারা একমত। এনসিপিও একই মত দিয়েছে।
শফিকুল বলেন, “নির্বাচন কমিশন বর্তমান অবস্থায় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ দিতে পারছে না— এমন মত দিয়েছে জামায়াত ও এনসিপি। তারা কমিশনের সংস্কারকে জরুরি মনে করেছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তারা জোর দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, বৈঠকে সংস্কার সংক্রান্ত আলোচনায় ঐক্যমত কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করে ‘জুলাই সনদ’ গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে জুলাই ঘোষণা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, এই মাসেই বিচার শুরু হবে এবং তা দ্রুত শেষ করতে সরকার আইনগতভাবে সব পদক্ষেপ নেবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনের প্রেক্ষাপটেই শনিবার রাতে এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন— খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
জামায়াতের হয়ে উপস্থিত ছিলেন— দলটির আমির ড. শফিকুর রহমান এবং নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
এনসিপির পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন— আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এবং তাসনিম জারা।
তিনটি বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন ঐক্যমত কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও।
এর আগে বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানান। এরপরই এই উদ্যোগ নেয় প্রধান উপদেষ্টা।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার কাজ করতে পারছে না— এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়ায়।
পরে ওই দিন সন্ধ্যায় গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে ইউনূসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই গুঞ্জন যে সত্য, তা প্রমাণ হয়।
দুই নেতা সেই বৈঠকে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ করতে। শুরুতে সংবাদ মাধ্যমকে দুই পক্ষ থেকেই নাম প্রকাশ না করে বক্তব্য দেওয়া হয়। পরে বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলামই নিজেই বলেন সব কিছু।
পরে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক শেষে উপদেষ্টারা নিজেরাও এ নিয়ে দীর্ঘ কথা বলেছেন। সেই বৈঠকের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নানা কিছু এসেছে। কিন্তু কোন বিষয়ে সরকার কাজ করতে পারছে না, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি।
You might also like

সম্পাদক :মোঃ শাহজালাল
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
You cannot print contents of this website.