এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনার অবসরে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনের সঙ্গে থাকা চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
তারা হলেন- এনবিআরের সদস্য (শুল্ক নীতি) হোসেন আহমদ, সদস্য (আয়কর) মো. আলমগীর হোসেন, সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. আব্দুর রউফ ও কর কমশিনার (আয়কর) মো. শব্বির আহমদ রয়েছেন।
চাকরির বয়সকাল ২৫ বছর হওয়ায় বুধবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে তাদের অবসরে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে সরকার ‘জনস্বার্থে’ তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মনে করায় অবসর দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তুলে ধরা হয়।
আগের দিন মঙ্গলবার মধ্যরাতে এক কমিশনারকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে সাময়িক বরখাস্তের মধ্যে এবার চারজনকে অবসরে পাঠানোর আদেশ এল।
চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখায় সেখানকার কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে সরকারের ‘নির্দেশনা অমান্য করে’ কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়।
এনবিআর বিলুপ্ত করে মে মাসে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারির পর শুরু হওয়া আন্দোলনের শেষ দিকে সংস্থার সব সদস্যও যোগ দেন। তখন অবসরে পাঠানো আয়কর বিভাগের সদস্য আলমগীর হোসেন এবং কাস্টমসের দুই সদস্য হোসেন আহমদ ও আব্দুর রউফও যুক্ত হয়েছিলেন।
অপরদিকে কমিশনার শব্বিরকে আন্দোলনের পক্ষে জনমত তৈরি করতে দেখা যায়। এনবিআরে সংস্কারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে কীভাবে রাজস্ব আদায়ের কাজ চলে তা নিয়ে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করতে দেখা যায়।
প্রথম দফায় মে মাসে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব ও নীতি বিভাগ আলাদা করার অধ্যাদেশের সময় আন্দোলনে নামেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। তখন সরকার এ থেকে পিছু হটে অধ্যাদেশ স্থগিত রেখে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে সংস্কার কাজ চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপর এনবিআরের কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের টানা এক সপ্তাহের কর্মসূচির মধ্যে শনিবার থেকে দেশের কাস্টম ও ভ্যাটের দপ্তরে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আসে।
এ কর্মসূচি চলতে থাকলে দ্বিতীয় দিন রোববার নড়েচড়ে বসে সরকার। এনবিআরের সেবা ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করে আন্দোলনরতদের কাজে যোগ দিতে কঠোর হুঁশিয়ারি আসে।
এরমধ্যেই আন্দোলনরত ছয় এনবিআর কর্মকর্তার ‘দুর্নীতির’ তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় দুদক।
আগের সূচি অনুযায়ী সেদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তাতে বসতে চাননি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। কমপ্লিট শাটডাউন চালু রাখা অবস্থায় তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা জানান।
এরমধ্যে সংকটের সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।
দিনভর নানা নাটকীয়তার মধ্যে পরে ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেই মেলে সমাধানের সূত্র। ওই বৈঠকে ‘ইতিবাচক আশ্বাসের’ ভিত্তিতে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।
ওই দিন রাত থেকেই কাস্টম হাউজ খুলে দেওয়া হয়; সোমবার থেকে কাজেও ফেরেন সকলে। তবে বদলি, মামলা ও বরখাস্তের আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মধ্যে।
মঙ্গলবার আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও তথ্যানুসন্ধানে নামে দুদক।