জোয়ারে ভেসে গেল শতাধিক গরু, গ্রামজুড়ে কান্না

1

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে শতাধিক গরু। গ্রামের পর গ্রামজুড়ে এখন শুধুই কৃষকদের কান্না আর নিঃস্বতার গল্প। চোখের সামনে জীবিকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাটি বলাকী গ্রামের মানুষজন।
শুক্রবার বিকাল চারটার দিকে গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন খালে এ ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, এতে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৬টি মৃত গরু উদ্ধার করা হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে আরও প্রায় ৬০টি।
স্থানীয় কৃষক মহসিন, নাহিদ, ইয়ানূর, এমা, মাসুম, আবুল হোসেন, শাহজালাল, কবির হোসেন খান, শরিফ হোসেন ও তরিকুল ইসলামেরসহ গ্রামের অনেকের গরু স্রোতের তোড়ে ভেসে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল খান বলেন, ‘এই দিনটা আমাদের জীবনে দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে। পুরো গ্রামে হাহাকার পড়ে গেছে। সবাই কৃষিকাজ করে, গরু লালন-পালনই আমাদের জীবনের বড় ভরসা ছিল।’
তিনি জানান, প্রতিদিনের মতোই শুক্রবার বিকেলে গরুগুলো চরে ঘাস খেয়ে ফিরে আসছিল। কিন্তু খাল পাড়ি দেওয়ার সময় হঠাৎ করে জোয়ারের পানি এবং কচুরিপানার স্রোতে শতাধিক গরু ভেসে যায়।
ভুক্তভোগী কৃষক মহসিন বলেন, “আমার ৪টা গরু ভেসে গেছে। সব শেষ হয়ে গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি, আর কোনো উপায় নেই।”
আবু তালেব সুজন খান জানান, “ভাটি বলাকী গ্রামের প্রায় ২৫-৩০টি পরিবারের ৫ শতাধিক গরু আছে। চরে চারণে যাওয়া এই গরুগুলোর মধ্যে শতাধিক শুক্রবার পানির তোড়ে ভেসে যায়।”
চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটতে দেখে হতবাক হয়ে পড়েন প্রত্যক্ষদর্শী নেয়ামূল হক। তিনি বলেন, “এমন দৃশ্য কোনোদিন দেখি নাই—একটার পর একটা গরু পানিতে ভেসে যাচ্ছে। কিছু করারও সুযোগ পাই নাই।”
হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, “এমন একটি খবর পেয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দ্রুত খোঁজখবর নিতে বলেছি।”
গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আরাফাত বিন ছিদ্দিক বলেন, “আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি। যতটুকু সম্ভব সহায়তা দেওয়া হবে।”
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম জানান, “এখন পর্যন্ত ৩৬টি মৃত গরু উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

- Advertisement -

- Advertisement -