ভয় দেখিয়ে জিতল বাংলাদেশ

2

আধুনিক ক্রিকেটে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে আড়াইশ’র নিচে পুঁজি কোনো ঘটনাই নয়। প্রেমাদাসার ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। এক ম্যাচ আগেই স্রেফ ২৪৪ রানের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। একই মন্ত্রে এবার লঙ্কানরা নিজেই কুপকাত! তানভীর ইসলামের স্পিন ঘূর্ণিতে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

- Advertisement -

- Advertisement -

টানা ব্যর্থতায় লম্বা সময় ধরে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছিল সিরিজ হারানোর ভয়! তবে সব ভয় মাড়িয়ে অবশেষে প্রেমাদাসায় বাংলাদেশ পেল ১৬ রানের জয়। সঙ্গে সিরিজেও ফেরাল ১-১ সমতা। সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আগামী ৮ জুলাই, পাল্লেকেলেতে।

রানাসিংহের এই ভেন্যুতে ২৪৮ পুঁজি নিরাপদ না হলেও একেবারে মন্দ নয়। তাছাড়া এই উইকেটে পরে বোলিং করা দল স্পিনে ভালো সুবিধা পায়। এটা কম বেশি সবারই জানা। প্রথম ওয়ানডেতে যেটা দেখিয়েছেন লঙ্কান বোলাররা। আজ একই চিত্রের দৃশায়ন হলো আবারও।

উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দারুণ বোলিং উপহার দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। গত ম্যাচে অভিষেক হওয়া তানভীর রান শুরুতেই ব্রেক থ্রু এনে দেন। পাথুম নিশানকাকে আউট করে বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পথ দেখান।

তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সেই চাপ সামলে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন কুশল মেন্ডিস। নিশান মাদুশকাকে বিদায় করে এই জুটি ভাঙেন তানজিম সাকিব। পরের আঘাত তানভীরের। এবার তিনি মাঠছাড়া করেন ভয়ংকর হয়ে ওঠা মেন্ডিসকে। ৩১ বলে ৫৬ রান করা মেন্ডিসকে এলবির ফাঁদে পেলে বিদায় করেন বাংলাদেশি স্পিনার।

মেন্ডিসের পর কামিন্দু ও ভেল্লালাগেও পরাস্থ হন তানভীরের স্পিনে। মাঝে অধিনায়ক আসালাঙ্কাকে তানভীরের হাতে ক্যাচ বানিয়ে উৎসবে মাতেন শামীম। একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপ বাড়ে শ্রীলঙ্কার। সেই চাপ সামলেও ম্যাচ বের করে ফেলেন জিনাথ। ৭৮ রানের ইনিংসে লঙ্কানদের জয়ের গল্পটাও প্রায় লিখে ফেলছিলেন তিনি।

তবে মোস্তাফিজুর রহমান সেটা হতে দিলেন না। উইকেটে জমে যাওয়া জিনাথকে বিদায় করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন কাটার মাস্টার।

বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৩৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচটি শিকার তানভীরের। মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা তানভীরের এটি প্রথম ফাইফার। দুটি নেন সাকিব। সমান একটি করে নেন মোস্তাফিজ, মিরাজ, শামীম ।

এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৫.৫ ওভার ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে তুলেছেন ২৪৮ রান। ব্যাট করতে নেমে যথারীতি শুরুতে উইকেট হারায়। আগের দিন সতীর্থদের লম্বা ইনিংস খেলার বার্তা দেওয়া তানজিদ আজ ফিরলেন সবার আগে। দলীয় ১০ রানে আসিথা ফার্নান্দোর বল কাভার দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ হন তানজিদ তামিম। উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৭ রান করেন এই ওপেনার।

নাজমুল শান্তকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা অবশ্য সামাল দিয়ে নেন পারভেজ ইমন। কিন্তু থিতু হয়ে ভাঙল এই জুটি। দলীয় ৭৩ রানে চারিত আসালাঙ্কার বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। এতে করে ১৪ রানে শেষ হয় শান্তর ইনিংস, ভাঙে ৫৫ বলে গড়া ৬৪ রানের জুটি।

জোড়া উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশকে নিয়ে ছুটছিলেন ইমন। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে ১৩ রান করা ইমন দ্বিতীয়টিতেই পেয়ে গেলেন ফিফটির দেখা। প্রথম ওয়ানডে ফিফটি পেতে ইমন খেলেছেন ৪৬ বল।

হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর অবশ্য বেশি আগায়নি ইমনের ইনিংস। বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ানো ইমন শেষ পর্যন্ত থামেব ৬৭ রানে। আগের ম্যাচের বিপজ্জনক হাসারাঙ্গার হাতেই ফিরেন তিনি। ফেরার আগে ৬৭ রান করতে তিনি খেলেছেন ৬৯ বল, হাঁকিয়েছেন ছয়টি চার ও তিনটি বাউন্ডারি।

দলীয় ১১০ রানে ইমন ফেরার পর মিডল অর্ডারে ফের নামে পুরনো ভুত। গত ম্যাচের মতো আজও ব্যর্থ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। চামিরার বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ১০ বলে ৯ রান করেন মিরাজ।

মিরাজের বিদায়ের পর শামীম হোসেনকে নিয়ে জুটি বাধার চেষ্টায় ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু ৩৩ রানের বেশি স্থায়ী হয়নি এই জুটি। ফার্নান্দোর বলে ২২ রানে শামীম ফিরলে ভাঙে এই জুটি।

মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় বাড়তে থাকে বাংলাদেশের চাপ। কমে রানের গতি। উইকেটে রানের গতি বাড়ানোর শেষ আশা ছিল জাকের আলি ও হৃদয়ের জুটি। কিন্তু ৪৫ রানের বেশি স্থায়ী হয়নি এই জুটিও।

ইনিংসের ৩৯তম ওভারে জাকের আলির আউটে ভাঙে এই জুটি। ফার্নান্দোর বলে এলবির শিকার হওয়ার আগে ৪০ বলে ২৪ রান করেন ফার্নান্দো।

ক্রিজে শেষ আশা হৃদয়ের প্রতিরোধ থামে রানআউটে। তানজিদ সাকিবের সঙ্গে রান নিতে বোঝাপোড়ার ভুলে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি। ৬৯ বলে ৫১ করে হৃদয় ফেরার পর বেশিদূর স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে শেষ পর্যন্ত আড়াইশ’র নিচে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

You might also like