লিটন দাস ব্যাট হাসলেই হাসে বাংলাদেশ! ডাম্বুলাতে আরেকবার দেখা গেল সেই চিত্র। টানা রানের খরায় থাকা লিটন জেগে উঠলেন রাঙ্গিরিতে। দারুণ ফিফটিতে বেধে দিলেন ব্যাটিংয়ের সুর। বল হাতে বাকি গল্পটা লিখলেন শরিফুল-রিশাদরা। দুই বিভাগের দাপটে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে ৮৩ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
পাল্লেকেলেতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হার। সিরিজ পিছিয়ে ১-০ ব্যবধান! এমন চাপের মুখে থেকে ডাম্বুলায় জেগে উঠল পুরো বাংলাদেশ দল। যে বাংলাদেশকে ডাম্বুলায় রোববার থামাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। বরং বাংলাদেশের সামনে রীতিমতো উড়ে যায় স্বাগতিকরা। দারুণ জয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ।
জয়ের পথটা সহজ করে দেন ব্যাটাররা। এনে দেন ১৭৭ রানের পুঁজি। যা তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেটের প্রাণ ভোমরা কুশল মেন্ডিসকে হারায় শ্রীলঙ্কা। রান আউট হওয়া মেন্ডিস ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। ওয়ানডাউনে নামা কুশল পেরেরাকে রানের খাতা খুলতে দেননি শরিফুল ইসলাম। বাংলাদেশি পেসারের গুড লেন্থের বল খেলতে গিয়ে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পেরেরা।
শুরুতে জোড়া উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কাকে পাওয়ার প্লেতে চাপে রাখে বাংলাদেশ। প্রথম ছয় ওভারে তারা হারিয়ে ফেলে চার উইকেট। তোলে মাত্র ৩৭ রান।
পাওয়ার প্লে শেষে আরও চাপ বাড়ান শরিফুল-রিশাদরা। বাংলাদেশের বোলিংয়ে নাকাল শ্রীলঙ্কা ৭৩ রানে হারিয়ে ফেলে ৭ উইকেট। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। মাত্র ১৫.১ ওভারে স্বাগতিকদের ৯৪ রানে থামিয়ে জয়ের উল্লাসে মাতে সফরকারীরা।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ তিনটি শিকার নেন রিশাদ হোসেন। সমান দুটি করে উইকেট নেন শরিফুল ও সাইফউদ্দিন। একটি করে নেন মুস্তাফিজ ও মিরাজ।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৭ উইকেটে ১৭৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান লিটন দাসের। এক চার ও পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে তিনি খেলেছেন ৭৬ রানের ইনিংস।
প্রেমাদাসা-পাল্লেকেলের মতো ডাম্বুলার উইকেটও রানপ্রসভা। তবে শুরুতে পেসার জন্য স্বর্গ। ঠিক সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চেয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাই টস জিতে বেছে নেয় বোলিং।
নিজেদের লক্ষ্যে শুরুতেই সফল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরুতেই দেয় জোড়া ধাক্কা। মাত্র ৭ রানের মধ্যে তুলে নেয় বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে। দুটোই আবার পেসারদের শিকার।
প্রথম উইকেটটি দেন পারভেজ হোসেন ইমন। প্রথম ওভারের শেষ বলে নুয়ান থুসারার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ইমন। রানের খাতাও খোলা হয়নি তার। আরেক ওপেনার উইকেট উপহার দেন বিনুরা ফার্নান্দোকে। লঙ্কান পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে শট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম (৫)।
জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কায় পাওয়ার প্লেটা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। ৬ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে স্রেফ ৩৯ রান। এই ছয় ওভারই মূলত বাংলাদেশের স্কোর
লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয় মিলে চেষ্টা করেন হাল ধরতে। টানা ফর্মহীনতায় ভোগা লিটন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে মারতে থাকেন লঙ্কান বোলারদের। অবশ্য থিতু হওয়া এই জুটি ৬৯ রানে ভাঙে হৃদয়ের বিদায়ে। তামিমের মতো তাকেও শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান বিনুরা ফার্নান্দো। ২৫ বলে ৩১ রান করে থামে হৃদয়ের ইনিংস।
একই ওভারে নতুন উইকেটে আসা ব্যাটার মিরাজকেও নিজের শিকার বানান ফার্নান্দো। তবে বাকিদের আসা-যাওয়ার ভিড়ে উইকেট আগলে রাখেন লিটন। টানা রানের খরার ভুগতে থাকা লিটন ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন ৩৯ বলে।
অধিনায়কের সঙ্গে উইকেটে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন শামীম হোসেন। দুজন মিলে বাংলাদেশের স্কোর নিয়ে যান দেড়শ পেরিয়ে। ফিফটি ছোঁয়ার পর হাত খুলে খেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মারতে গিয়েই ৭৬ রানে থুরাসার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
অধিনায়ক ফেরার পর জাকের আলি অনিককে নিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ১৭০ এর ঘরে নিয়ে যান শামীম। উইকেটে টিকে থেকে ২৭ বলে ৪৮ রানের ইনিংস উপহার দেন এই ব্যাটার। জাকের করেন ৩ রান। আর সাইফউদ্দিন করেন ৬ রান।
শ্রীলঙ্কার হয়ে বল হাতে ৩১ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন বিনুরা ফার্নান্দো। নুয়ান থুসারার শিকার ৩০ রানে একটি। এ ছাড়া মাহেশ থিকশানা নেন একটি উইকেট।