অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন পৃথিবী সৃষ্টির জন্য মূলত নিত্যনতুন প্রযুক্তি প্রধান কারণ। আর প্রযুক্তির প্রাধান্যের সাথে আসে ভাষার প্রাধান্য। যে দেশের প্রযুক্তি পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবে, সে দেশের ভাষাও শক্তিশালী হবে।পৃথিবীর মানুষ সেই ভাষা শেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চার দিনব্যাপী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ অনুষ্ঠানে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড বিজয়ীদের সনদপত্র প্রদান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক প্রদান করা হয়।
এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কার পেয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসা ও অনুবাদক জোসেফ ডেভিড উইন্টার। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদক পেয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস প্যারিস।
ড. ইউনুস বলেন, ‘জাতি এগোলে ভাষা এগোয়। ভাষার সম্মান বাড়ে ‘
তিনি বলেন, ‘যে দেশ পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেবে পৃথিবী সে দেশের ভাষার দিকে ঝুঁকে পড়বে…এটাই নিয়ম। যে দেশের কিছু দেওয়ার নেই সে দেশের ভাষাতেও পৃথিবীর আগ্রহ নেই অথবা থাকলেও নিম্ন পর্যায়ে থাকবে। প্রযুক্তি ছাড়াও যেকোনো দিক থেকে একটি জাতি নেতৃত্ব দিতে পারলে সে দেশের ভাষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বেই—সে ভাষা যত জটিলই হোক না কেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভাষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির সঙ্গে সাহিত্য, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান—সরাসরিভাবে জড়িত।’
ইউনূস বলেন, জাতির মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তা গঠনের বীজ রোহিত হয়েছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বাঙালির মর্যাদা সূচিত হলেও এর মূল চেতনা হচ্ছে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তা ছিল বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন। তাই বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথানত না করার দৃঢ় প্রত্যয়।
তিনি বলেন, ‘এটি শুধু বেদনার্ত অতীতকে স্মরণ করে অশ্রু বিসর্জনের দিন নয়, বরং এক অবিনাশী প্রেরণা, সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্র। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আনতে আমাদের আত্মত্যাগ করতে হয়েছে অনেক। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
অনুষ্ঠানে বাংলা, গারো, ইংরেজি, রাশিয়া, স্প্যানিশ, আরবি, চীনাসহ ১০টি ভাষায় প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করে কয়েকজন শিশু।
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।