ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মীকে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে কর্মবিরতি পালন করছেন মেট্রোরেল কর্মীরা। তবে এতে মেট্রোরেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।
সোমবার সকাল থেকেই স্বাভাবিকভাবে মেট্রোরেল চলাচল করছে। তবে যাত্রী উপস্থিতি কিছুটা কম।
সোমবার সকালে মেট্রোরেলের কাওরান বাজার স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনে মেট্রোরেল চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। স্টেশনে কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি। পেইড জোনেও আগের মতো নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করা যায়নি। যাত্রীরা টিকিট পাঞ্চ না করেই ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন। তবে প্রতিদিনের মতো মেট্রোরেলে নেই যাত্রীদের চাপ।
এর আগে, সোমবার দিবাগত রাতে ডিএমটিসিএলের একাধিক কর্মী সাংবাদিকদের জানান, আজ সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মচারীদের ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা তথ্য তুলে ধরে ৬টি দাবি জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমআরটি পুলিশ সদস্যের হাতে চারজন কর্মী লাঞ্ছিত হয়েছে।
কর্মীদের দাবিগুলো হচ্ছে—আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে; মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে; এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্য সব কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ছাড়া ও অনুমতি ব্যতি কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল বিকেল সোয়া ৫টায় সচিবালয় স্টেশনে দুইজন নারী কোনো প্রকার পরিচয়পত্র প্রদর্শন না করেই সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না, তাই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ছাড়া সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।
পরে ঠিক একইভাবে দুইজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান। এ বিষয়ের তাদের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ’র সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ’র কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করেন এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও’র শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করেন। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীগণ বিষয়টি অনুধাবন করে উক্ত এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে। এই পরিস্থিতি মেট্রোরেল কর্মপরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। বর্তমানে আহত (রাইফেল দিয়ে কাঁধে আঘাত করা হয়) সিআরএকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং টিএমও (যাকে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে হেনস্তা করা হয়, গুলি করার জন্য বুকে রাইফেল ধরা হয়) ওই ঘটনার বিবৃতি দেওয়ার পর বাসায় যাওয়ার পথে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।