অন্তর্বর্তী সরকারকে মতপ্রকাশ ও মতের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান

আর্টিকেল নাইনটিনের বিবৃতি

28

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে মতপ্রকাশ ও মতের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিনসহ ৯টি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

- Advertisement -

- Advertisement -

এতে বলা হয়, সাংবাদিক, ভিন্নমত পোষণকারী, সমাজকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় এবং অ-রাষ্ট্রীয় শক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের মতপ্রকাশের অধিকার নির্ভয়ে চর্চার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এই আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড এলায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ফোর্টিফাই রাইটস, ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডারস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, পেন আমেরিকা ও দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত মাসে বাংলাদেশে সাধারণ জনগণ এবং মানবাধিকার কর্মীদের মতপ্রকাশের অধিকার চর্চার ফলে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া গ্রেপ্তার, হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনাগুলো নিয়ে আমরা নিন্মোক্ত স্বাক্ষরিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার দীর্ঘদিন ধরেই বাধাগ্রস্ত হয়ে এসেছে। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণে, এই অতীত থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যদিও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সব্গুলোই রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা হয়নি, তবুও বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়াও মতপ্রকাশের অধিকার চর্চার ফলে কোনো নাগরিক যেন অ-রাষ্ট্রীয় কোনো শক্তির আক্রমণের শিকার না হয়, তা সুরক্ষা দেওয়াও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’

ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে কয়েকটি ঘটনার বর্ণনাও দিয়ে বলা হয়, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ ধারা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির (ICCPR) ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশও ICCPR এর অন্তর্ভুক্ত একটি রাষ্ট্র। এছাড়াও, ICCPR-এর ৯ নম্বর ধারা ব্যক্তির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করে। বাংলাদেশকে অবশ্যই অতিদ্রুত সাংবাদিকসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া হয়রানি ও সহিংসতামূলক ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করতে হবে এবং তদন্ত শুরু করতে হবে। একইসাথে এসব হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

শুধু সাংবাদিকই নয়, লেখক, কবি ও মানবাধিকার কর্মীরাও সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করে এসব সংগঠন।

এতে যেসব আহ্বান জানানো হয়–

যেকোনো খসড়া আইনের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ পরামর্শ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করুন যেন তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।

শুধু মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য আটককৃত ব্যক্তি ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে সমস্ত অপরাধমূলক অভিযোগ অবিলম্বে এবং নিঃশর্তে প্রত্যাহার করুন।

মতপ্রকাশের অধিকার চর্চাকারী ব্যক্তি ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ আনা বন্ধ করুন এবং ধর্ম বা ধর্মীয় অনুভূতির সুরক্ষার অজুহাতে এই অধিকার সীমিত করার যেসব আইনগত ধারাসমূহ আছে, সেগুলো বাতিল করুন।

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল বা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত, কোনো ব্যক্তিকে যেন মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘনের আইনে গ্রেপ্তার বা আটক করা না হয়, তা নিশ্চিত করুন।

সাংবাদিক ও অন্যান্য মিডিয়া কর্মীদের বিরুদ্ধে আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তদন্ত করুন এবং যারা এই অধিকার চর্চাকারী ব্যক্তিদের ওপর সহিংসতা চালিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছাড়া তাদেরকে ন্যায্য ও নিরপেক্ষ বিচারে বিচার নিশ্চিত করুন।

সাংবাদিক, অন্যান্য মিডিয়া কর্মী, নাগরিক সমাজের কর্মী এবং মানবাধিকার কর্মীদের রাষ্ট্রীয় বা অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী থেকে হয়রানি, হুমকি বা সহিংসতা থেকে রক্ষা করুন এবং তাদের বাধাহীনভাবে সাংবাদিকতা করতে সাহায্য করুন।

আর্টিকেল নাইনটিন একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা নিশ্চিতে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি ২০০৮ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় এর কার্যক্রম শুরু করে।

You might also like