আনন্দ শোভাযাত্রায় পাহাড়-সমতলের ২৮ জাতিগোষ্ঠী

16

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করে নিতে ইতিমধ্যে রাজধানীজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বরাবরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।
তবে এবারের আয়োজনে যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা—পাহাড় ও সমতলের ২৮টি প্রান্তিক নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছে, যা বর্ষবরণের বর্ণিল উৎসবকে রূপ দিচ্ছে আরও বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এক সংস্কৃতিক আবহে।
সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর এবং বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা হয়ে সাড় ১০টায় চারুকলায় এসে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে ম্রো, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, রাখাইন, মনিপুরী, সাঁওতাল, মুণ্ডা, মালো, গারো, মাহাতো, রাজবংশীসহ আরও অনেক প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠী—যারা নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বাদ্যযন্ত্র ও শিল্পনৈপুণ্যে এই উৎসবকে করে তুলেছে বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময়।
শোভাযাত্রার মোটিফে এবার রয়েছে একাধিক ব্যতিক্রমী উপাদান। থাকছে সাতটি বড়, সাতটি মাঝারি এবং সাতটি ছোট মোটিফ। বড় মোটিফগুলোর মধ্যে রয়েছে—কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, টাইপোগ্রাফিতে লেখা “৩৬ জুলাই”, শান্তির পায়রা, ঐতিহ্যবাহী পালকি, জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের স্মরণে ‘পানির বোতল’ এবং বিশেষভাবে সংযুক্ত হয়েছে তরমুজের মোটিফ, যা ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি এক প্রতীকী সংহতি প্রকাশ করে।
এছাড়া রয়েছে সুলতানি ও মুঘল আমলের ১০টি মুখোশ, ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০টি রঙিন চরকি, ২০০টি বাঘের মুখ, তালপাতার তৈরি ৮টি সেপাই, ১০টি পলো, ৫টি তুহিন পাখি, ৬টি মাছ ধরার চাই, ৪টি পাখা, ২০টি মাথাল, ২০টি ঘোড়া, ৫টি লাঙল, ৫টি মাছের ডোলা, এবং ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস—যা এবারের শোভাযাত্রাকে করে তুলবে ভিন্নমাত্রার, বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা।
জাতিসংঘের ইউনেস্কো স্বীকৃত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি এবার পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এ পরিবর্তন ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনা। চারুকলার বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আয়োজক কমিটির কাছে এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তাদের বক্তব্য, মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু একটি নাম নয়, এটি এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীক—যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ও ঐক্যবদ্ধ চেতনার প্রকাশ।

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like