ইউনূস-ফখরুল বৈঠক: তবু বিএনপিকে ‘সন্তুষ্ট’ ভাবছে সরকার

18

নির্বাচন ঠিক কবে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব না পেয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানানো বিএনপিকে ‘সন্তুষ্ট’ বলেই মনে করছে সরকার।
বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের তরফে এই এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
এই বৈঠকে বিএনপির তরফে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার জবাব না পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদকর্মীদেরকে বলেন, “তার (প্রধান উপদেষ্টার) বক্তব্যে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।”
বিএনপি নেতার এই প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, “বিএনপি মহাসচিবের এটি বলার অধিকার আছে। তবে আলোচনা শেষে আমার কাছে উনাদের খুশি মনে হয়েছে।
“উনারা অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। ফখরুল ভাইয়ের কাছে অন্য রকম মনে হতে পারে। উনারা উনাদের আশঙ্কার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, এসব আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। উনাদের মতামত আমরা বিবেচনায় নিয়েছি, আমরা আরও সচেতন থাকব। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তারা সন্তুষ্ট।”
গত বছরের ৫ আগস্ট তুমুল গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন প্রশ্নে দুটি সময়সীমা দিচ্ছে।
সীমিত পরিমাণে সংস্কার চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে আর বড় পরিসরে সংস্কার চাইলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন- এমন অবস্থানের কথা একাধিকবার বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনাতেও একই কথা বলেন ইউনূস। পরে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদেরকে বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে, আমাদের কাটঅফ টাইম ইজ ডিসেম্বর।”
এই সময়ের মধ্যে ভোট না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলেও সরকার প্রধানকে সতর্ক করেন বিএনপি নেতা।
তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় না পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, তারা ‘একেবারেই সন্তুষ্ট নন’।
এ বৈঠকের জন্য বেলা সোয়া ১২টায় ‘যমুনা’য় পৌঁছায় বিএনপি মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য। পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতারা।
মির্জা ফখরুলের ‘অসন্তুষ্টির’ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “বিএনপির সাথে অত্যন্ত খোলামেলা ও আন্তরিকতার সাথে দুই ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা হয়েছে। উনারা মন খুলে কথা বলেছেন। আমরা কিছু কিছু বিষয়ে উত্তর দিয়েছি।”
‘নির্বাচনে ইচ্ছে করে দেরি নয়’
আইন উপদেষ্টা বলেন, “বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ‘ভালো হয়’ বলে জানিয়েছে। তারা বলেছেন, আমাদের কথার মধ্যে কিছু অস্পষ্টতা থাকে। সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা অন্য রকম কথা বলছেন। আমরা বলেছি, ‘যে যেটাই বলুক না কেন প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বারবার যা বলেছেন সেটাই সরকারের অবস্থান।
“অন্য কেউ যদি বেফাঁস বা নিজস্ব বিবেচনাপ্রসূত কথা বলেন, তাহলে তারা যেন বিভ্রান্ত না হন। নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কথাই চূড়ান্ত।’
গত ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে একটি থানা উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, রাস্তাঘাটে তারা শুনতে পেরেছেন যে বর্তমান সরকারকে জনগণ আরও কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য চায়।
পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন নিয়ে কিছু বলিনি। জনগণ বলেছে। সাংবাদিকরা ছিলেন তারা শুনেছে।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা স্পষ্ট করেছি, ডিসেম্বর থেকে জুন মানে এই নয় যে আমরা ইচ্ছে করে দেরি করব। এর মানে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমরা সময় বাড়িয়ে এক বা দুইমাস বেশি ক্ষমতায় থাকব, তা নয়।”
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন।
বেশিরভাগ সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা বলেছেন, বিএনপি সব সময় সংস্কারপন্থি দল, আমরা তা স্বীকার করে বলেছি। বিএনপি অবশ্যই সংস্কারপন্থি দল। ঐকমত্য কমিশনসহ সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিশনগুলোর বিষয়ে বিএনপি পজিটিভ রেসপন্স করেছে।
“তারা দুই-একদিনের মধ্যেই কমিশনের সাথে বসবে এবং তারা অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবের সাথে একমত পোষণ করে। জুলাই চার্টারও খুব দ্রুতই তৈরি হয়ে যাবে।”
বিচার না করলে জনগণের কাছে কী জবাব দেব?
গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণহানির ঘটনায় বিচার নিয়ে এক প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, “জনগণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে আমরা যেন বিচার করে যাই। আমরা যদি কোনো বিচার শেষ করে না যাই, তাহলে আমরা মানুষের কাছে জবাব দেব কী করে?”
বিচারের সময় বেশি লাগার কারণ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা জামায়াত নেতাদের একটি ‘বিতর্কিত’ বিচার করেছে। এতে প্রতিটি বিচারে গড়ে সময় লেগেছে আড়াই বছর। জুলাইয়ে যে ভয়াবহ ও ব্যাপক অপরাধ ঘটেছে সেটার বিচারের জন্য উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রসিকিউশন ও তদন্তকারী দল অনেক পরিশ্রম করছে। তারা আমাদের কাছে যা সাহায্য চাচ্ছে তা দেওয়া হচ্ছে।”
এই বিচারের জন্যই নির্বাচন নিয়ে দুটি সময়ের কথা জানানো হচ্ছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, “এ জন্যই আমরা ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলেছি। কোনোভাবেই নির্বাচন এর পরে যাবে না।
“এটা প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার। পাশাপাশি যতটা সম্ভব আমরা সংস্কার করে যেতে চাই।”

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like