পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত
ছয় দফা দাবিতে ডাকা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সারাদেশে এই কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল।
ভোর চারটার দিকে এক ভিডিওবার্তায় কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানান কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম ও জুবায়ের পাটোয়ারী।
শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের সঙ্গে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বৈঠক হবে। এরপর তারা নতুন সিদ্ধান্ত জানাবে।
ভিডিও বার্তায় মাসফিক ইসলাম বলেন, “বৈঠকে ছয় দফাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সেই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে সারাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে। বৈঠক চলাকালীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।”
জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, “তৃতীয় পক্ষ এবং বিভিন্ন কুচক্রী মহল আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত এবং ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। আপনারা বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। আমরা সরকারের বিপক্ষে নই, সরকারকে সহযোগিতা করে আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করব।”
এছাড়া ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, “আজ ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের হস্তক্ষেপে শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ।’ সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিদ্ধান্তক্রমে বৈঠক চলাকালীন রেল ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল থাকবে। বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে সারা বাংলাদেশের সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জন্য পরবর্তী কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে।”
ছয় দফা দাবিতে বুধবার সকাল ১০টার দিকে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ঢাকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সারাদেশে জেলায় জেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
দিনভর বিক্ষোভ-অবরোধের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। ঘোষণা অনুযায়ী- বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে রেলপথ ব্লকেড করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ভোরে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো-
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (দশম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
