১১ বছর ঝুলে থাকা ‘বে টার্মিনাল’ অনুমোদন
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নেওয়া বে-টার্মিনাল প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যে ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, তার মধ্যে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল আলোচিত বে টার্মিনাল প্রকল্প, যেটির আলোচনা চলছে ২০১৪ সালে থেকেই।
পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেকের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বে টার্মিনাল’ নির্মাণ প্রকল্পসহ ১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একনেক বৈঠকে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।”
পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভা
এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
দেশের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক মানের বন্দরের কথা মাথায় রেখে ১১ বছর আগে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর তিন বছর পর প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাই হলেও মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে।
চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৩ সাল থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশ করতে পারে। সেগুলো ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০টি একক কনটেইনার নিয়ে আসে।
বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে আরও বড় আকারের জাহাজ ভিড়তে পারবে আরও বেশি কনটেইনার নিয়ে। চার হাজার একক কনটেইনার বহনকারী জাহাজ ভিড়তে পারবে।
বেশি ড্রাফটের বড় জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) ভেড়ানো, চলমান বাণিজ্য বৃদ্ধির সাথে বন্দর সম্প্রসারণের বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৪ সালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় ‘বে-টার্মিনাল’ প্রকল্প করার কাজ হাতে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ সালে বিদেশি একটি কোম্পানি এ প্রকল্পের কারিগরি, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা করে মহাপরিকল্পনা তৈরি করে। গত বছরের নভেম্বরে মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কনটেইনার টার্মিনাল, ১ হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল তৈরির কথা রয়েছে।
৪ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি টার্মিনালের ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে ১২ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) এবং ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুটি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি হয়েছে ইতোমধ্যে।
৮৭০ একর জমিতে এ প্রকল্পের কথা চিন্তা করা হলেও এখন পর্যন্ত ৫৬৮ একর জায়গা বুঝে পেয়েছে বন্দর। চলতি বছরের মে মাসে এসব জমি বরাদ্দ হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর আসলে নদী বন্দর। কাজেই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমুদ্র বন্দর দরকার। এজন্য বে টার্মিনালটির অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নেওয়া বে-টামিনাল প্রকল্প ১১ বছর ঝুলে আছে।
“এর একটি আজ অনুমোদন পেল। আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের ( পিপিপি) মাধ্যমে। সব মিলিয়ে এখানে চারটি টার্মিনাল হবে এবং এটি মেগা প্রকল্প হবে। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত শেষ হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।”
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারও একনেক সভায় অংশ নেন।
যেসব প্রকল্প অনুমোদন
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্প, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এবং চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন। এছাড়া গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা, তিতাস ও বাখরাবাদে দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ।
বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্প, বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্প এবং বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্পও অনুমোদন পেয়েছে।
অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশে কৃষি খাত রূপান্তরের টেকসই ও সহনশীল বিনিয়োগে কারিগরি সহায়তা কর্মসূচি, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (সংশোধিত), সবার জন্য বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর প্রকল্প, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প, উন্নত সহনশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা জোরদারকরণ প্রকল্প।