রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় প্রথমে জামিন দেওয়া হয় প্রাক্তন ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে। পরে হাইকোর্টের সেই আদেশ স্থগিত করে চেম্বার জজ আদালত। কিছুক্ষণ বাদে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করে একই আদালত।
একই সঙ্গে জামিন স্থগিতের আবেদন শুনানির জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করে দেওয়া হয়। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবীর বক্তব্য শুনবে চেম্বার জজ আদালত।
বুধবার সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত এ আদেশ দেয়।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালত যে আদেশ দিয়েছিলেন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকবে। তবে জামিন বহাল থাকলেও আদালতের আদেশ হাতে না আসায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের কারামুক্তি হচ্ছে না।”
এর আগে জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
বুধবার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার বেঞ্চ রায় দেয়।
ফলে চিন্ময়ের মুক্তিতে কোনো বাধা না থাকার কথা জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী। তবে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিন সন্ধ্যায় শুনানি শেষে চেম্বার জজ আদালত জামিন স্থগিত করে আদেশ দেয়।
তারও আগে চিন্ময়কে কেন জামিন দেওয়া হবে না- এই প্রশ্নে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করে বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ। এতে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে চিন্ময় দেশের নানা প্রান্তে বেশ বড় বড় সমাবেশ করেছিলেন।
আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের ইসকন পরিচালিত মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ।
২৫ অক্টোবর তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের সমাবেশের পাঁচ দিন পর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময়কেও আসামি করা হয়।
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে সেই সমাবেশে জাতীয় পতাকার উপর গেরুয়া আরেকটি পতাকা টাঙানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর পর ব্যাপক সমালোচনা হলে পতাকা সরিয়ে ফেলা হয়। এই ঘটনাতেই মামলা হয়।
সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন জামিন আবেদন করা হলে তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
সেদিন চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময়ের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইনজীবীর সাইফুল ইসলাম আলিফকে আদালত চত্বরের বাইরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এরপর চিন্ময়ের জামিন আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে একাধিকবার নাকচ হয়। চিন্ময়ের পক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে বাধা পাওয়ার অভিযোগও এনেছিলেন।
এতে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।