অনলাইন জুয়া বন্ধে কেন ব্যবস্থা নয়: হাইকোর্টের রুল

18

অনলাইন জুয়ার সব ওয়েবসাইট, লিংক, অ্যাপ, গেইটওয়ে এবং এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন অপসারণে সরকারকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ), পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রবিবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে অনলাইন জুয়া বন্ধে এবং জড়িতদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে জুয়ার বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতে রিটে পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তার সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদ কাউছার, নাঈম সরদার এবং বায়েজীদ হোসাইন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন বদিউজ্জামান তপাদার।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, “গত ১৬ এপ্রিল অনলাইন জুয়া খেলার সকল ওয়েবসাইট, লিংক, গেটওয়ে অবিলম্বে বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ), পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবরে মানবাধিকার সংগঠন ল এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে এই নোটিশ পাঠানো হয়।”
এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে হাইকোর্টে মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে হুমায়ন কবির পল্লব রিট করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুয়া খেলা বেআইনি এবং অপরাধ। কিন্তু বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনলাইন জুয়া বাংলাদেশের মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্য মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখ লোক অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। হাতে হাতে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট থাকায় প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরাও জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে। ফলে লাখ লাখ লোক জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশীয় সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নামিদামী সেলিব্রেটি এবং শোবিজ মডেল ও তারকা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক একাউন্টে টাকার বিনিময়ে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রমোট করছেন। অনেক টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়া তাদের পেইজে বিভিন্ন জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।
রিটে বলা হয়, দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মডেল পিয়া জান্নাতুল, শবনম বুবলি,সামিরা খান মাহি, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি, অপু বিশ্বাসসহ অনেকে বিভিন্ন সময় নিজস্ব ফেসবুক পেজে বাণিজ্যিক কারণে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে জুয়াকে সম্প্রসারণ করেছেন। ওয়ান এক্সবেটসহ অনলাইন অ্যাপস এবং ক্যাসিনোগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন লোকাল ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে অনলাইন জুয়া খেলা হয়। এর সঙ্গে স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টরা জড়িত বলে পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে। বিষয়গুলো খুবই উদ্বেগজনক এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কাজেই অবিলম্বে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল লিংক, সাইট, গেটওয়ে,অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ বা ব্লক করতে হবে।
এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করে।

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like