‘মানবিক করিডোর’ কোথা থেকে এসেছে জানি না: গোয়েন লুইস

7

‘মানবিক করিডোর’ শব্দটির উৎস সম্পর্কে জানেন না ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। তিনি বলেছেন, “মানবিক করিডোর এই নামটি কোথা থেকে এসেছে আমি জানি না। কিন্তু এটা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজেদের বিষয়।”
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিকাব) ‘ডিকাব টকে’ এই মন্তব্য করেন তিনি।
মানবিক করিডোর ইস্যুতে জাতিসংঘের অবস্থান জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, “যেটিকে মানবিক করিডোর বলা হচ্ছে তা একটি আনুষ্ঠানিক (লিগ্যাল ইস্যু) আইনগত ব্যাপার। এটা নিয়ে সার্বভৌম দেশের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও মিয়ানমারসহ একাধিক পক্ষ এর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত। যদি কোনো চুক্তি হয়, জাতিসংঘ সেটি সমর্থন করতে পারে। তবে যতটুকু জানি, এখনো কোনো চুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী বলেন, “আমি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যারা এটার সঙ্গে জড়িত তাদের অনুরোধ করব, এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে। এটা একটি আইনগত ব্যাপার। এটা দেশগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটা জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপার নয়।”
চার বছর ধরে জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন রাজ্যের কায়ুকফায়ু সমুদ্রবন্দর ছাড়া পুরোটা দখলে দেয় আরাকান আর্মি।
গত বছরের নভেম্বরে ‘রাখাইন: গড়ে উঠছে একটি দুর্ভিক্ষ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রাখাইন। বাণিজ্য প্রায় বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে থাকার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে মানুষের আর্থিক সংকট এবং ব্যাপক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি উপার্জন আর স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকমাত্রায় কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরের পর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ‘মানবিক সহায়তা চ্যানেল’ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান।
গত ১৪ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে যান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে আলোচনায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলে’ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম তুলে ধরে ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মিয়ানমার সরকার- সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা, যে সংকট সেটা মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নাই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে।”
তার ওই বক্তব্যের পর গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান ‘মানবিক প্যাসেজ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে।
উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক শুরু হয়। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক দলগুলো।
রাজনৈতিক দলগুলোর এমন বিরোধিতার মুখে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ’ বা ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া নিয়ে ‘জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার’ সঙ্গে সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি।
সম্প্রতি এই করিডোর নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে আসলে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
পরে ২১ মে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি, হবেও না।… পররাষ্ট্র উপদেষ্টা করিডোর শব্দটি স্লিপ অব টাং।”
‘নির্বাচন নিয়ে ভূমিকা নেই’
ডিকাব টকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশি হলে সংস্কার ও না নির্বাচন কোনটাকে প্রাধান্য দিতেন? গোয়েন লুইস বলেন, “এটা সরকারের ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়।”
শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের অবস্থান প্রসঙ্গে লুইস বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে যেকোনো গঠনমূলক উদ্যোগকে জাতিসংঘ সমর্থন করতে পারে। তবে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো মন্তব্য আমি করব না।”
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতিসংঘ কোনো উদ্যোগ নেবে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আগের কথার পুনরাবৃত্তি করেন। বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। এটা সরকারের ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়।”
অনির্বাচিত সরকারকে জাতিসংঘ কতদিন সমর্থন দেবে- জানতে চাইলে লুইস সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে আমরা শুধু টেকনিক্যাল সহায়তা দিই। নির্বাচন কখন হবে, সে বিষয়ে আমাদের কোন ভূমিকা নেই। এ নিয়ে আমাদের কোনো রাজনৈতিক অবস্থানও নেই। এটা পুরোপুরি বাংলাদেশের জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিষয়।”
তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সংলাপ ও ঐক্যমতের চেষ্টার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমি ঐকমত্য কমিশনের কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সংলাপ হয়েছে, অধিকাংশ বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে, সেটি একটি শক্তিশালী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভালো নেতৃত্ব দিয়েছে।”
ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like