ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন শপথ নেবেন কি না, সেটি সরকারের বিষয় বলে মন্তব্য এসেছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। নির্বাচন কমিশন এ ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে ইশরাক আর দায়িত্ব নিতে পারবেন কি না, এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে কি না, এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বুধবার নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ কথা বলেন।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপন বহাল থাকবে বলেও জানান তিনি।
ইশরাকের শপথ নিয়ে এক প্রশ্নে সানাউল্লাহ বলেন, ‘‘কমিশনের দায়িত্ব গেজেট প্রকাশ। শপথের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। আইনি কোনো বিষয় না থাকলে আমরা তাদের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করেছিলাম।”
সমাধান এখন কী? এক প্রশ্নের জবাবে জবাব আসে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে গেজেট পর্যন্ত পাবলিশ করা আর শপথের ব্যাপারটি স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে কারা এটার ব্যবস্থা করবে।
“আমরা যেটা বলেছি আমাদের চিঠির মাধ্যমে যে, এখানে যদি কোনো আইনি জটিলতা না থাকে বা অপরাপর কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে আমরা তাদের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছি।”
এ বিষয়ে কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আর কোনো চিঠি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি না। আইনি বিষয়গুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেখবে।”
জটিল থেকে জটিলতর পরিস্থিতি
নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল থেকে ইশরাক রায় পান গত ২৭ মার্চ। করপোরেশন ভেঙে দেওয়া না হলে তার মেয়াদ তখনও দুই মাসের কিছু বেশি সময় অবশিষ্ট থাকত।
ভেঙে দেওয়া করপোরেশনের শাহাদাতের মেয়র হওয়ার ধারাবাহিকতা থাকলে ইশরাকও মাস খানেকের বেশি সময়ের মেয়র হতে পারতেন।
নির্বাচন কমিশন গত ২৭ এপ্রিল তাকে মেয়র হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপনও জারি করে। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তার শপথের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
অপেক্ষার মধ্যে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলন শুরু করে এবং নগর ভবনের সামনে অবরোধ দিয়ে নাগরিক সেবা প্রায় অসম্ভব করে তোলে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয় গত ২২ মে। সেদিন ইশরাক সমর্থকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করতে যান। বাধা পেয়ে মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল সড়কে অবস্থান নেন। একই দিন বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অন্য একটি দাবি নিয়ে অবস্থান নেয় শাহবাগ থেকে পরীবাগ।
শহরের দুটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখার পর দুঃসহ যানজটে ভুগতে থাকে নগরবাসী। সেদিন প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে চান বলে চাওর হয়।
সেদিনই ইশরাক হাইকোর্ট থেকে রায় পান। তাকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়াতে এক ব্যক্তির করা আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
তবু ইশরাকের কপাল ফেরেনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ‘আইনি জটিলতা’র কথা বলে শপথ আয়োজন থেকে বিরত থাকে।
পরে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান আবেদনকারী। সেটি খারিজ হয় ২৯ মে। কিন্তু ততদিনে করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় হয় অবস্থা।
ইশরাক যে করপোরেশনের মেয়র হতে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়েছেন, সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ১ জুন। এর মধ্যে আপিল বিভাগের রায়ের সার্টিফাইড কপি আর বের হয়নি।
২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে জয়ী ঘোষণার পর তিনি শপথ নেন ২৭ ফেব্রুয়ারি। করপোরেশনের ২ জুন ছিল প্রথম বোর্ড সভা, ফলে মেয়াদ সেদিনই নির্দিষ্ট হয়ে যায় ১ জুন, ২০২৫।
আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। কিন্তু আইনি জটিলতা হলে নির্বাহী আদেশ বা আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকে।
এই জটিলতার কারণে ইশরাকের পক্ষে আর মেয়র হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেছে’
বিকালে নির্বাচন কমিশনের সভায় জামায়াতের নিবন্ধন ও ইশরাকের বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জামায়াতকে তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লাসহ নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার সানাউল্লাহ।
ইশরাকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেনি বলে উচ্চ আদালত থেকে যে মন্তব্য এসেছে, সে বিষয়েও প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘আপিল বিভাগ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং সুপ্রিমেসি অন ইলেকশন ম্যাটার্স আবারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। পূর্ববর্তী পাঁচটি মামলার রেফারেন্স দিয়েছেন, আমরা সেগুলো দেখেছি। তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত ইসির দায়িত্ব। আপিল বিভাগের রায়ে গেজেট বাতিল হয়নি। সুতরাং নির্বাচন কমিশন তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে।
“নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয় নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তথা তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে এবং সম্পন্ন হয় গেজেট পাবলিকেশন এর মাধ্যমে। বিধায় আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে এবং গেজেট বহাল আছে।”