‘গোপন’ বন্দি বিনিময়ে সুব্রতকে পায় র‌্যাব: গুম কমিশন

1

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ২০২৪ সালের ৬ থেকে ৭ অগাস্টের মধ্যে র‍্যাবের টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টাররোগেশন (টিএফআই) সেল থেকে মুক্তি পান বলে উঠে এসেছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে।

- Advertisement -

- Advertisement -

কমিশন বলছে, মুক্তির প্রায় আড়াই বছর আগে ভারত ও বাংলাদেশের ‘গোপন ও অবৈধ’ বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে সুব্রতকে র‌্যাবের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের এক-দুই দিন পরেই ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত এ সন্ত্রাসীকে কারা, কেন, কীভাবে মুক্তি দিল, সেসব তথ্য কমিশনের প্রতিবেদনে আসেনি।

কমিশন বলছে, দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে ‘গোপন ও অবৈধ’ বন্দি বিনিময়ের ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালে; এপ্রিলের শেষ দিকে। ওই সময় সুব্রতকে ফিরে পাওয়ার বিপরীতে ভারতের এক অপরাধীকে সেদেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়, যিনি র‌্যাবের টিএফআই সেলেই বন্দি ছিলেন।

গত ২৭ মে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। সুব্রত ও মোল্লা মাসুদকে ধরা হয় কুষ্টিয়া থেকে; বাকি দুজন গ্রেপ্তার হয় ঢাকার হাতিরঝিলে।

তবে সুব্রত ব্রাইন কবে দেশে ফেরেন, কিংবা কবে টিএফআই সেল থেকে ছাড়া পান, সে তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফে সেদিন জানানো হয়নি।

গুম কমিশন বলছে, সুব্রতকে দেশে আনা হয় ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল। তিনি শুরু থেকেই টিএফআই সেলে বন্দি ছিলেন। সেখানে তিনি পাইলসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। বাইরের জগতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। টিএফআই সেলের কর্মীরাও তাকে এড়িয়ে চলতেন।

কমিশন বলছে, সুব্রতকে টিএফআই সেলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার যে ‘গুজব’ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, তার কোনো প্রমাণ তাদের অনুসন্ধানে মেলেনি।

“তবে মুক্তির পর তিনি আবার অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রভাবশালীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করেন এবং হত্যার আদেশ দিতে শুরু করেন।”

১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে সুব্রত বাইনের সন্ত্রাসী জীবনের উত্থান শুরু হয়।

২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে, সেই তালিকায় তার নাম ছিল।

কমিশন বলছে, “সুব্রতর মত আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন অপরাধীকে আটক করার আদেশ কেবল র‍্যাবের ভেতর থেকে আসতে পারে না। আমরা মনে করি, এটা অবশ্যই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়, কমপক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায় থেকে আসা সিদ্ধান্ত ছিল।

“তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, কেন র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা তাকে এত দীর্ঘ সময় গোপনে আটক রাখল? কিংবা বাইরের জগৎ থেকে কেন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখল, যেখানে ‘সামান্য’ অপরাধে অনেককে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে।”

গেল মাসে গ্রেপ্তারের সময় সুব্রতসহ চারজনের কাছে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন পাওয়ার কথা বলে আইএসপিআর।

এ ঘটনায় পরের দিন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।

কিন্তু ভারত থেকে আনার পর থেকে গত অগাস্টে ছাড়া পাওয়া— মাঝের সময়ে তাকে কেন বিচারের আওতায় আনা হল না, সেই ব্যাখ্যা কমিশন পায়নি।

সম্ভাব্য কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, “সম্ভবত তার অবৈধ হস্তান্তর প্রক্রিয়া আইনি প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছিল এবং রাজনৈতিক বা কূটনৈতিকভাবে মামলা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।

“আবার এমনও হতে পারে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রভাবেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”

২০০৩ সালে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে।

তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত।

এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন সুব্রত বাইন।

সূত্র: বিডিনিউজ