রিটার্নিং-প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগে ইসিতে নতুন চিন্তা

2

জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে রিটার্নিং ও প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন।

- Advertisement -

- Advertisement -

তিনি জানিয়েছেন, যেখানে প্রয়োজন সেখানে জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নাসির উদ্দীন বলেন, “মোটামুটিভাবে তাদের যোগ্যতা দেখে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অফিসারদের নিয়োগ করব। তবে শর্ত হলো যে, তাদেরকে উপযুক্ত কর্মকর্তা হতে হবে।”

সাধারণত জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরাই রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও ছিল নানা প্রশ্ন। যে কারণে বিভিন্ন সময় ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার কথাও উঠেছে।

এবার পরিবর্তনের আভাস দিয়ে সিইসি জানান, “নির্বাচন কমিশনের অফিসাররা আগে তো এমন দায়িত্ব কখনো পালন করেনি। লোকাল গভর্মেন্টে কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিল। বহু সিটি কর্পোরেশনে তো তারা রিটার্নিং অফিসার ছিল। সংস্কার কমিশনও এই প্রস্তাব করেছে।

“আমরা মোটামুটিভাবে যাচাই করে দেখব—যাদের উপযুক্ত মনে হবে, তাদেরকেই নিয়োগ দেব। বাকিটা আমাদের জেলা প্রশাসকের ওপর নির্ভর করতে হবে। যাচাই করে যাদের যোগ্য মনে হবে তাদেরকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে সবার সহযোগিতা আমি পাব। সে বিশ্বাস আমার আছে।”

নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে নির্বাচনের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা হলে কোনো সমস্যা হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “আশা করি সমস্যা হবে না। কারণ সরকার তো ম্যাসেজ দিচ্ছে সবাইকে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা আছে। সব কিছু মিলিয়ে আমি মনে করি না যে অসহযোগিতা পাওয়া যাবে।”

ব্যাংকারদের প্রিসাইডিং অফিসার করার চিন্তা

সাধারণত বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে ভোটকেন্দ্রের মূল দায়িত্বে থাকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকেন সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসাররা।

সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনগুলোতে দেশে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজের শিক্ষকদেরই প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হতো।

তাই সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সহায়তায় নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। এবার সে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশন নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে।

নাসির উদ্দীন বলেন, “বিগত নির্বাচনগুলোতে, যারা রিগিংয়ে সহায়তা করেছে—যে সমস্ত প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার—আমরা তাদেরকে যথাসম্ভব পরিহার করব।”

সিইসি বলেন, “আমাদের চিন্তা আছে ব্যাংকের অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া। কারণ এরা তো সরকারে ছিল না। এরা তো রিগিংয়ের (ভোটে কারচুপি) সহযোগী ছিল না। আমরা ব্যাংকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় রাখছি।”

কীভাবে যাচাই বাছাই করা হবে এর ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমাদের নির্বাচন কমিশনের জেলা অফিসাররা সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমরা অলরেডি এই কাজ শুরু করেছি। যথাসম্ভব আগামী নির্বাচনে তাদেরকে আমরা পরিহার করব। তাদেরকে কাজে লাগাব না।”

প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট

বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের সুযোগ দিতে প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য চার ধরনের ভোটিং পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

শুরুতে প্রক্সি ভোটিং, অনলাইন, পোস্টাল কিংবা সশরীরে ভোট- এই চারটি বিকল্প পদ্ধতিকে সামনে রেখে কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে শেষ পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালটেই ভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

নাসির উদ্দীন বলেন, “প্রবাসীদের ভোট নিয়ে আমরা নানা ধরনের অপশন নিয়ে আলোচনা করেছি বিশেষজ্ঞদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত দেখলাম ম্যাক্সিমাম লোকই পোস্টাল ব্যালটটাকে সাপোর্ট করে। এজন্য আমরা কমিশন থেকে ডিসিশন নিয়েছি যে ভোট হবে অনলাইন বেসড পোস্টাল ব্যালট।”

যেসব প্রবাসী আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন তাদেরকে আগে থেকেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে বলেও জানান সিইসি।

নাসির উদ্দীন বলেন, “আমরা এখন অনলাইনে একটা প্লাটফরম বানাব, মানুষের অপশন নেওয়ার জন্য, তাদেরকে প্রবাসী ভোটার হিসেবে ট্রিট করব। পরে তাদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠাব। এটা অনেকটা কস্টলি (ব্যয়বহুল) হবে। আমরা এজন্য ডিএইচএল ও ফেডেক্সের (আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস) সঙ্গে কথা বলেছি। একেকটা ভোটের জন্য পাঁচ হাজার টাকা লাগবে”।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা হলো ডিএইচএল ও ফেডেক্সের খরচ। তবে সরকারি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এটা করলে ভোটার প্রতি ৭০০ টাকা খরচ হবে। আমরা অভিয়াসলি সরকারি পোস্ট অফিসকে ইউজ করব। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা স্পেশাল অ্যারেজমেন্ট করবে। কুইকলি যাতে হয়।”

সীমানা পুনর্নির্ধারণে চাপহীন থাকার দাবি

সংসদীয় আসনে সীমানা নির্ধারণে অসংখ্য আবেদন জমা পড়লেও চাপ নেই বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

নাসির উদ্দীন বলেন, “আমাদের ওপর কোন চাপ নাই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে অনেক আবেদন আছে। এটা চাপ না।”

সিইসি জানান, এ পর্যন্ত ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৭১টি সংসদীয় আসনের সীমানা বিভিন্ন রকম আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অর্ন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ১৮-৩৩ বছর বয়সী ভোটারদের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে আলাদা বুথের বিষয়ে ইসিকে ভাবতে বলা হলেও সিইসি জানিয়েছেন এই বিষয়ে তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।

You might also like