১০ মাসে এডিপির অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি

0

চলতি অর্থবছর শেষ হতে মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও এ সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্ধেক বরাদ্দও ব্যয় হয়নি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল এই ১০ মাসে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে বরাদ্দের মাত্র ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন।
সোমবার বাস্তবায়ন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইএমইডির তথ্য বলছে, জুলাই থেকে এপ্রিল সময়ে বাস্তবায়নের এ হার গত দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ হার ছিল ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দের ব্যয় এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ৩১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা কম হয়েছে।
সংশোধিত এডিপি বরাদ্দের ৯৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এসময়ে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সংশোধিত এডিপি থেকে ব্যয় করা হয়েছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।
সরকারের এই এডিপি বাস্তবায়নের হার যেকোন অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ সংশোধিত এডিপিতে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় কম হবে। কারণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে অন্তবর্তীকালীন সরকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করেছে। অনেক প্রকল্প কাটছাঁট করেছে। আগের সরকারের সময়ে নেওয়া অনেক প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। আবার অনেক প্রকল্পে ঠিকাদার চলে যাওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে।”
“চলতি অর্থবছরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা এখনও রয়েছে। একারণে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় হয়নি। এছাড়া আমাদের দেশে একটা প্রবণতা হলো শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে এডিপির অর্থ ব্যয় করা। শেষের দিকে তাড়াহুড়া করে অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় হয়, দুর্নীতি হয়।”
অর্থবছরের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে অর্থ ব্যয় প্রসঙ্গে এক প্রশ্নর জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করে প্রথম দিকে প্রকল্পে বেশি অর্থ ছাড় করলে অপচয় হওয়ার সুযোগ বাড়ে। এ কারণে তারা অর্থবছর জুড়ে অল্প অল্প করে অর্থছাড় করে।”
তিনি আরও বলেন, “সিজনাল সমস্যার কারণে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। যেমন অর্থ ছাড় হতে হতে যদি বর্ষা চলে আসে— তাহলে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে সরকার মৌসুমের কথা বিবেচনায় নিয়ে অর্থছাড়ের পরিকল্পনা করছে।”
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দসহ এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। গণ আন্দোলনে সরকার পতনকে কেন্দ্র করে জুলাই-আগস্ট জুড়ে জ্বালাও পোড়াওয়ের পর এডিপি বাস্তবায়নে ধস নামে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়। আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থবির হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য। সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার তা আরও কমে গেছে।

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like