জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে প্রতিষ্ঠানটিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমাদের দ্বিতীয় দাবি অর্থাৎ অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিটি এখনও পূরণ হয়নি। আমরা ২৯ মের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের জন্য সময় সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত প্রদান করেনি।”
“কিন্তু বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে বলে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে আমাদের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ঐক্য পরিষদ।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টিকারী, প্রসেস টেম্পারিং ও সকলের অগোচরে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মূল কাঠামো ধ্বংসের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী এই চেয়ারম্যানের হাতে প্রকৃত সংস্কার কার্যক্রম হুমকির মুখে বিধায় আমরা আশা করছি সরকার অবিলম্বে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার।
পরদিন থেকে এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা। তাদের মোট চারটি দাবি ছিল, তার মধ্যে একটি ছিল চেয়ারম্যানের অপসারণ।
তাদের আন্দোলনের মুখে অর্থ মন্ত্রণালয় এখন বলছে, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।
৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এনবিআর বিলুপ্তের অধ্যাদেশে সংশোধন করার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারও করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এনবিআর, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি এবং ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত করার কথা জানিয়ে রবিবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদের বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয় মূলত আন্দোলনের কারণে।
সোমবারের থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা ছিল ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’। এই কর্মবিরতিতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
রবিবার রাতেই সরকার পিছু হটে। অর্থ মন্ত্রণালয় গত ১২ মের অধ্যাদেশ সংশোধনের সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। এরপর ঐক্য পরিষদও এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানায়।
তবে চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবি থেকে পিছপা হয়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
তাদের বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার চরম সংকট সৃষ্টি হওয়ায় তাকে অপসারণের দাবির ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ঘোষিত লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি যথারীতি অব্যাহত আছে এবং থাকবে।”
এতে আরও বলা হয়, “জারিকৃত অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার শুরু থেকে প্রতিটি ধাপে বর্তমান চেয়ারম্যান লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছেন ও চরম অসহযোগিতা করেছেন এবং সরকারকে ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।”
“বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী প্রশাসনের এই কর্মকর্তা তার পূর্ববর্তী পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ জুলাই পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কর ফাঁকি বিষয়ে সহযোগিতা করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অডিট কার্যক্রম বন্ধ করেন।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এছাড়াও, নজিরবিহীনভাবে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে অযৌক্তিক এবং অপরিকল্পিতভাবে ভ্যাট হার বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন।
তিনি বিভিন্ন উপায়ে সরকারের সাথে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের গঠনমূলক ও সার্থক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।”
ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, “এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিসমূহের বিষয়ে সরকারকে শুরু থেকেই বিভ্রান্ত করে সরকারের সাথে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টা করে পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতিকে দীর্ঘায়িত ও জটিল করেছেন।”
“তার অবস্থান অতি নেতিবাচক ও ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেত। স্বাভাবিকভাবে উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে আমরা সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের পূর্ব পর্যন্ত তাঁকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।”