আগামী বাজেটে সাধারণ করদাতাদের আয়করে বড় কোনো ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা নেই সরকারের। গতকাল শনিবার পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। অর্থাৎ করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য কর বাড়তে পারে। পুঁজিবাজারে অনিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে বাড়বে করপোরেট করহার। আবার লাভ হোক, লোকসান হোক, নির্দিষ্ট হারে যে কর দিতে হয়, সেটা এবার বাড়তে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর কিছুটা কমবে। জমি কেনাবেচায় কর কমানো হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামীকাল সোমবার আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেট দেবেন। তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এবারের বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটা হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। দেখা যাচ্ছে, সরকার বাজেটের কর খাতে বড় কোনো পরিবর্তন আনছে না। কিছু হেরফের করা হচ্ছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় দেওয়া হতে পারে। যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর কিছুটা কমবে। জমি কেনাবেচায় কর কমানো হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হতে পারে।
করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ২০২৫-২৬ করবর্ষে অপরিবর্তিত থাকছে। তবে করস্তরগুলোর সর্বোচ্চ স্তরে ধনীদের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ কর বসানোর প্রস্তাব থাকতে পারে, যা এখন ২৫ শতাংশ।
বর্তমানে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ, বছরে এই পর্যন্ত আয় হলে কর দিতে হয় না। আবার মোট আয় থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বাদ দিয়ে করের পরিমাণ হিসাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলে মানুষ স্বস্তি পায়। বাংলাদেশে করমুক্ত আয়সীমা কম এবং মূল্যস্ফীতির হার চড়া—এ দুই বিবেচনায় ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন অনেকেই।
সূত্র জানায়, এবার কোনো ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা গতকাল পর্যন্ত ছিল না। তবে বাজেটে পরের দুই করবর্ষে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রাখার ঘোষণা থাকবে। সে ক্ষেত্রে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত গেজেটভুক্ত ব্যক্তিদের করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হতে পারে।
ন্যূনতম করে ছাড় দেওয়া হতে পারে নতুন করদাতাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে। বর্তমানে এলাকাভেদে ন্যূনতম কর ৩ তিন থেকে ৫ হাজার টাকা, যা নতুন করদাতাদের জন্য কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হতে পারে।
করপোরেট কর বাড়বে
বাজেটে করপোরেট কর বাড়তে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হতে পারে। ব্যাংকসহ আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় লেনদেনের শর্তে করপোরেট কর ২৫ শতাংশই থাকবে। তবে সে শর্ত পূরণ কঠিন হতে পারে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করপোরেট কর অব্যাহত থাকছে। পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাবও করতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা। এ ছাড়া সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ওপর করহার কমানো হতে পারে।
বর্তমানে বছরে তিন কোটি টাকার বেশি টার্নওভার (বছরে লেনদেন) হয় এমন প্রতিষ্ঠানকে লাভ-লোকসান নির্বিশেষে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে। মানে হলো, পণ্য বা সেবা বিক্রির মোট আয়ের ওপর ১ শতাংশ কর দিতে হবে।