প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শুল্কের ভয়ে’ বাংলাদেশে মার্কিন কোম্পানি ওয়ালমার্টের কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত করার খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তিন কারখানা মালিকের বক্তব্যের পাশাপাশি এ বিষয়ক নথি হাতে পাওয়ার দাবি জানিয়ে শনিবার এ খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে, যা দেশের জিডিপির ১০ শতাংশ।
এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায় এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। আগামী ১ অগাস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
কারখানা মালিকরা আশঙ্কা করছেন, ১ অগাস্ট ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হলে ক্রয়াদেশ কমে যাবে।
প্যাট্রিয়ট ইকো অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন রয়টার্সকে বলেন, অতিরিক্ত শুল্কের ভয়ে সাঁতারের প্রায় ১০ লাখ প্যান্টের ক্রয়াদেশ বৃহস্পতিবার স্থগিত করতে হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, তারা ক্লাসিক ফ্যাশনের কর্মকর্তা ফারুক সৈকতের একটি ইমেইল হাতে পেয়েছে, যেটা ইকবাল হোসেনসহ অন্যদের পাঠানো হয়েছিল।
ক্লাসিক ফ্যাশন হল সরবরাহকারী কোম্পানি ও বায়িং এজেন্ট, যারা খুচরা বিক্রেতাদের হয়ে ক্রয়াদেশ দিয়ে থাকে।
ইমেইলে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি তুলে ধরে ফারুক সৈকত বলেছেন, “আমাদের মধ্যে যেমনটা আলোচনা হয়েছে, সে অনুযায়ী দয়া করে বসন্তের সব ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখুন।”
তিনি লেখেন, “নিজেদের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্দেশে আমরা আপাতত বাংলাদেশে উৎপাদন স্থগিত করছি। তবে শুল্কের বিষয়টি সুরাহা হলে আমরা আগের পরিকল্পনা ধরেই কাজ করব।”
ফারুক সৈকত অবশ্য রয়টার্সকে বলেছেন, “ক্রয়াদেশ স্থগিতের এ সিদ্ধান্ত ওয়ালমার্টের নয়, এটা ক্লাসিক ফ্যাশনের সিদ্ধান্ত।”
রয়টার্স বলছে, তারা এ বিষয়ে ওয়ালার্টের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে মিত্র-শত্রু নির্বিচারে ব্যাপক শুল্কারোপ করেন ট্রাম্প। সেই শুল্কারোপের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে পরে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা উঠিয়ে দর কষাকষিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এই সময়ে।
তবে ৯ জুলাইয়ের দুদিন আগেই বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে চিঠি দিয়ে নতুন হারে শুল্কারোপের কথা বলেন ট্রাম্প। শেষ সময়ে চুক্তি করতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েও কাজ হয়নি।
ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কেবল বাণিজ্য চুক্তি করতে পেরেছে যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনাম। ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তির কাছাকাছি থাকার কথা বলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার দ্বিতীয় দফার বাণিজ্য আলোচনা শেষে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিছু বিষয় ‘ঐকমত্য’ হয়েছে; কিছু বিষয় ‘অমীমাংসিত’ থেকে গেছে।