‘ আফজাল-এর মতো চার-ছয় ঝুড়িতে খুব কম লোকেরই আছে ‘

অভিনেতা আফজাল হোসেনের ৭১তম জন্মদিনে বন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন ফরিদুর রেজা সাগর

5

প্রিয় সখা আমার। তাকে নিয়ে আমার কিছু বলা হয় না, লেখা হয় না। তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব স্বাধীনতার সমান বয়স। ১৯৭২ সালে সে ঢাকায় আসে, আর্ট কলেজে ভর্তি হয়। রোগা পাতলা একটি ছেলে চোখেমুখে বিশাল স্বপ্ন। সে তখন ছোটদের সংগঠন চাঁদের হাট-এর সঙ্গে জড়িত শিল্প সম্পাদক হিসেবে। আমরাও তখন চাঁদের হাটের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছি।

- Advertisement -

- Advertisement -

দু’জনে একসঙ্গে চাঁদের হাট করি। সংগঠন হিসেবে চাঁদের হাট-এর আত্মপ্রকাশের দিন তার সঙ্গে আমার দেখা। দেখলাম সে একটি মঞ্চ তৈরি করছে। গায়ে পড়েই আলাপ করলাম তার সঙ্গে।  কি নাম ভাই তোমার?
সে বলল, আফজাল হোসেন।

আমি বললাম, ও তোমার আঁকা ছবি তো চাঁদের হাটের পাতায় দেখেছি। সে মিষ্টি করে হাসলো। এই যে আফজাল হোসেন-এর সঙ্গে কথা হলো সেই থেকে এখনও আমাদের বন্ধুত্ব চলছে। সুখেদুখে, হাসিকান্নায়, প্রেমেঅপ্রেমে সবসময় কাছাকাছি আছি আমরা। আফজাল শুধু আমার বন্ধু বললেও ভুল হবে। সেই ১৯৭২ সাল থেকেই আমার আম্মা প্রখ্যাত লেখক রাবেয়া খাতুনের সঙ্গেও তার বন্ধুত্ব। সে আমার বাবা ফজলুল হকেরও বন্ধু। কনা রেজার সাথেও তার বন্ধুত্ব।

আমার দুই মেয়ে মেঘনা ও মোহনারও বন্ধু আফজাল। আমি নিশ্চিত আমার নাতি-নাতনি মায়রা-মায়রনের সঙ্গেও আফজালের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগবে না। এমনই এক তরুণ আফজাল হোসেন। যে আফজাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের নায়ক। চিরদিনই সে নায়ক। আজও সে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছে। আফজাল একজনই। বহুমাত্রিক চরিত্র আফজাল হোসেন।

আফজাল হোসেন জন্ম নিয়েছেন সাতক্ষীরায়। ছেলেবেলা কাটিয়েছে সেখানে। যৌবন কাটিয়েছে আর্ট কলেজে। বিজ্ঞাপন ব্যবসা করেছে মাত্রা’র মাধ্যমে। ফাঁকে ফাঁকে ছবি এঁকেছে। নাটক বানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিটিভির দুর্দান্ত জনপ্রিয় নাটক ‘পারলে না রুমকি’র কথা মনে পড়ে যায়। অনেক সুন্দর সুন্দর ফিচার লেখে সে। একসময় পত্রিকায় কাজ করত গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে। সিনেমাতেও কিছুদিন মন দিয়েছিল। ফ্যাশনেরও একজন আইকন। নিজের ডিজাইন করা জামা কাপড়ই পরে থাকে।

কী না করে সে–ছবি আঁকে, ড্রয়িং করে, বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকে। বিজ্ঞাপন চিত্রে ডিজাইন করে। ফিল্ম বানায়। টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ করে। যেখানেই হাত দেয় সেখানেই সোনা ফলে। এই আফজাল নাটক লেখে, উপন্যাস লেখে। কবিতা লেখে। বইপাগল একজন মানুষ। দেশে-বিদেশে আফজালের প্রচুর ভক্ত। তার কর্মের ভক্ত। তার লেখার ভক্ত, অভিনয়ের ভক্ত। আমি অবাক হয়ে অনুধাবন করি পঞ্চাশ বছর ধরে একই ভাবে দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এরকম রেকর্ড মিডিয়া লাইনে খুঁজে পাই না। আফজাল-এর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব অনেক দিনের হলেও কথা যে নিয়মিত হয় তা কিন্তু নয়। হঠাৎ করেই হয়তো মধ্যরাতে আমাদের বাসায় এসে হাজির হলো। সবাইকে জাগিয়ে হইচই করলো। আমাদের সেই আড্ডা গিয়ে থামলো ভোর রাতে। কত বিচিত্র কথা। কত মানুষের কথা। কত সুন্দর করে গল্প বলে! আমি অবাক হয়ে শুনি তার গল্প বলা।

আফজালের কোনো তুলনা হয় না। তাকে দেখে বোঝা যাবে না তার বয়স কত। ৭১ বছরের একজন তরুণ সে। এই বয়সের তরুণরা যা করতে চায় আফজাল তার চেয়ে বেশি কিছু করে। এখনও নাটক বানায়। অভিনয় করে দাপটের সঙ্গে। ঘুরে বেড়ায় দেশ বিদেশে। ক্যামেরা তার সাথেই থাকে। এক অভিনব কর্মক্ষম মানুষ। সেই আফজাল ৭১ পূর্ণ করছে। হায় আফজাল তোমারও ৭১! কত স্মৃতি তোমার সঙ্গে। আমাদের বাসাবোর বাড়িতে, বনানীর বাড়িতে, খাবার দাবার পিঠাঘরে কিংবা বিটিভির সেই ঘূর্ণায়মান সিঁড়িতে আড্ডায় বসে কত না দিন কেটে গেছে। তোমার সঙ্গে কত স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে আছে দেশে-বিদেশে। আফজালের সঙ্গে কলকাতা গিয়েছি, ইউরোপ গিয়েছি।

পুরো এশিয়া ঘুরেছি। সবখানে আফজাল হোসেন নিজের মতো থাকে, নিজের মতো ঘুরে বেড়ায়। আফজালকে ভালো রাখতে চাই, আনন্দে রাখতে চাই। আমার স্বপ্নের সমান মানুষ আফজাল হোসেন। আফজাল আমার ‘ছোটকাকু’ নিয়ে লেখাকে পর্দায় এনেছে। আফজাল-এর কাজের কোনো তুলনা নেই। সব কাজই সে ভালোবাসা নিয়ে করে। কাজে কোনো ফাঁকি নেই। এজন্য আমরা বন্ধুবান্ধব আফজালকে অনেক ভালোবাসি।

আফজালের মতো আমাদের মধ্যে অনেকেই নট আউট পার করেছে কিন্তু আফজাল-এর মতো চার-ছয় ঝুড়িতে খুব কম লোকেরই আছে। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতায় ৭১ থেকে সামনে শতক হাঁকাবে এই প্রত্যাশা।

সমকালের সৌজন্যে

 

You might also like