রাশিয়া-ইউক্রেনের ইস্টার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

6

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার যে ৩০ ঘণ্টার ‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করেছিলেন, তা রবিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টার দিকে শেষ হয়েছে। তবে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়পক্ষই একে অপরকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, রবিবার সারাদিনে রুশ বাহিনী যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে প্রায় ৩ হাজারবার হামলা চালিয়েছে। তবে এসব হামলায় হতাহতের বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
জেলেনস্কি জানান, সবচেয়ে তীব্র হামলা হয়েছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোকরোভস্ক শহরের আশপাশে। যা ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র। দোনেৎস্কের অধিকাংশ এলাকাই বর্তমানে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
যদিও গত রবিবার তিনি বলেছিলেন, “আজ কোনো বিমান হামলার সাইরেন বাজেনি,” যা ইঙ্গিত দেয় রাশিয়ার চালানো প্রতিদিনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইস্টারের দিন বন্ধ ছিল।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীই শত শত ড্রোন দিয়ে ও কামানের গোলা ছুড়ে রুশ অবস্থানগুলোতে আক্রমণ করেছে। রুশ সেনারা কেবল তা প্রতিহত করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির সময় যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহকৃত হিমারস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
আক্রমণ প্রতিহত করা ব্যতিত রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে মান্য করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন।
তবে বিবিসি এই উভয় পক্ষের কোনো দাবিই স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ইস্টার উপলক্ষে গত শনিবার ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এর জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, “ইউক্রেনীয় কার্যক্রমের স্বভাব আগের মতোই থাকবে। নীরবতার জবাবে আমরা নীরব থাকব, আর আমাদের আক্রমণ হবে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে।”
তিনি আরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন, “অন্তত ৩০ দিনের জন্য সব ধরনের দীর্ঘপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ রাখা হোক, প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো যাবে।”
যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, ক্রেমলিন জানিয়েছে পুতিন এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো নির্দেশ দেননি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তিনি বলেছেন, “আশা করি রাশিয়া ও ইউক্রেন এই সপ্তাহেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে”, তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, দ্রুত কোনো সমঝোতা না হলে মধ্যস্ততার প্রচেষ্টা থেকে সরে আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে এবং বর্তমানে দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড তাদের সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে মস্কো কর্তৃক দখল করা দক্ষিণাঞ্চলের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ।
এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই পক্ষের লক্ষাধিক সেনাসহ কয়েক লাখ মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like