যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা আপাতত স্থগিত করেছেন দেশটির একটি আদালত।
শুক্রবার এক সংক্ষিপ্ত রায়ে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ অ্যালিসন বারোসহ এই অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করেন। এর ফলে বৃহস্পতিবার দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম অ্যাক্সেস বাতিলের সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ হলো।
হার্ভার্ডের করা মামলার প্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছে আদালত। বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত “আইন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন”।
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই অবৈধ ও অনভিপ্রেত পদক্ষেপ আমরা কঠোরভাবে নিন্দা জানাই।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম, শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপের একটি অংশ। এটি হার্ভার্ডের স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ।”
হোয়াইট হাউসের উপ-প্রেস সচিব আবিগেল জ্যাকসন পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “হার্ভার্ড যদি তাদের ক্যাম্পাসে চলমান মার্কিনবিরোধী ও ইহুদিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড বন্ধে এতটাই সচেষ্ট হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতো না।”
পরে তিনি বিচারকের বিরুদ্ধে “উদারপন্থী এজেন্ডা” অনুসরণের অভিযোগও আনেন।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা
হার্ভার্ডে বর্তমানে ৬,৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ। এদের মধ্যে চীন, কানাডা, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এমনকি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়ছেন বেলজিয়ামের ভবিষ্যৎ রানী এলিজাবেথও।
বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পর অনেক শিক্ষার্থী চিন্তিত হয়ে পড়েন-তাদের কী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে? তারা কি আর ফিরে আসতে পারবেন না?
উত্তর আয়ারল্যান্ডের করম্যাক সাভেজ, যিনি মাত্র ছয় দিনের মধ্যে সরকার ও ভাষা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করবেন। তিনি বলেন, “আমি জানি, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে আমি এখনো বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারব। কিন্তু তারপর কী হবে, জানি না।”
যুক্তরাজ্য থেকে আসা শিক্ষার্থী রোহান বাটুলা বলেন, “আমি ভাবছিলাম বাড়ি গেলে হয়তো আর ফিরে আসতে পারব না। তাই ক্যাম্পাসেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।”
সিয়েরা লিওন থেকে আসা আইজ্যাক বানগুরা হার্ভার্ডে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে পড়ছেন। স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে আসা এই শিক্ষার্থী বলেন, “গতকাল থেকে আমার বাচ্চারা জিজ্ঞেস করছে-‘বাবা, আমাদের কি আবার ফেরত পাঠাবে?’ ওরা বুঝে গেছে, এটা ডিপোর্টেশনের প্রশ্ন।”
লিও অ্যাকারম্যান নামে আরেক শিক্ষার্থী আগস্টে হার্ভার্ডে পড়াশোনা শুরু করার কথা ছিল। তিনি বলেন, “এই সুযোগ আমার স্বপ্ন ছিল। এখন অনিশ্চয়তা যে ভর করেছে, সেটা খুবই বেদনাদায়ক।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত পূর্ণ টিউশন দেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের বড় উৎস। এই অর্থই অনেক সময় মার্কিন শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য ব্যয় হয়।
হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ-বিশ্ববিদ্যালয়টি ইহুদিবিদ্বেষ এবং প্রো-ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে, এবং তারা রক্ষণশীল মতবাদ উপেক্ষা করে। এসব অভিযোগ হার্ভার্ড দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ২.২ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-ছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দেয়। তখনও হার্ভার্ড আদালতের শরণাপন্ন হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলাটি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে, যেখানে ফলাফল অনিশ্চিত হতে পারে। তবে হার্ভার্ড লড়াই চালিয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী ২৯ মে বোস্টনে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এই শুনানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রে হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।
You might also like

সম্পাদক :মোঃ শাহজালাল
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
You cannot print contents of this website.