বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্র্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে যে চিঠি দিয়েছেন, তাকে ‘হুঁশিয়ারিও’ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ যদি এর জবাবে নিজেদের শুল্ক বৃদ্ধি করে, তবে সেই বর্ধিত হারও যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত হবে।”
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ভোর ২টা ৩৬ মিনিটে ওই চিঠি প্রকাশ করেন ট্রাম্প এতে লেখা হয় বলেন, “আগামী ১ আগস্ট, ২০২৫ থেকে, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যেকোনো এবং সকল বাংলাদেশি পণ্যের উপর খাতভিত্তিক সকল শুল্কের বাইরে আলাদাভাবে মাত্র ৩৫% শুল্ক আরোপ করব।”
বাংলাদেশি পণ্যে এখন গড়ে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এখন থেকে ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক নেবে দেশটি।
গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক নেয়, ধরে নিয়ে তার অর্ধেক হিসেবে এই শুল্কারোপ করা হয়।
কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের শতাধিক দেশের ওপরেই একই নীতিতে শুল্কারোপ করা হয়। সে সময় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু সরকার সরকার ট্রাম্পকে এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করার অনুরোধ করে।
পরে ৯ এপ্রিল সেই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুল্ক কমিয়ে আনার চেষ্টা চলতে থাকে।
তবে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার আগের দিন যুক্তরাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত জানায়, তাতে পারস্পরিক শুল্ক কমে কেবল ২ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। দেশটি থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়, রপ্তানি হয় তার চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এই বাণিজ্য ঘাটতিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প।
প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, কেবল সরাসরি নয়, অন্য কোনো দেশ হয়ে পণ্য পাঠালেও তা একই হারে শুল্কের আওতায় পড়বে।
“আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির বৈষম্য দূর করার জন্য যা প্রয়োজন, এই ৩৫ শতাংশ সংখ্যাটি তার চেয়ে অনেক কম।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
ট্রাম্প লিখেছেন বলেন, “এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতির জন্য এবং প্রকৃতপক্ষে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি!”
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যেতে এখনো ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও আছেন।
সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি
চিঠিতে আলোচনার একটি রাস্তাও চিঠিতে খোলা রাখা হয়েছে।
ট্রাম্প লিখেছেন, “আপনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আপনার এযাবৎকাল ধরে বন্ধ থাকা বাণিজ্যিক বাজারগুলো খুলে দিতে এবং আপনার শুল্ক ও অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে ইচ্ছুক হন, তাহলে আমরা হয়তো এই চিঠির বিষয়ে একটি সমন্বয়ের কথা বিবেচনা করব।”
মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক দফা আলোচনা হয়েছে, আরও একটি বৈঠক হবে ৯ জুলাই।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি এই আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশের জন্য লাভজনক একটি শুল্ক চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।”
বাংলাদেশ কী কী করেছে
ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানানোর পর গত ৭ এপ্রিল তা চিঠি দেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। এতে লেখা হয়, “চলমান পরিকল্পিত কাজগুলো আমরা পরবর্তী প্রান্তিকের মধ্যে শেষ করব। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সূচারুভাবে শেষ করতে দয়া করে প্রয়োজনীয় সময় আমাদের দিন।”
ইউনূস লেখেন দেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে যা যা করা দরকার বাংলাদেশ তা করবে।”
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানি, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণ, এবং মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার সহজ করার নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়।
তিনি লেখেন, “আমাদের পদক্ষেপের একটি মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য বিশেষ করে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা… ডিউটি-ফ্রি সুবিধাসহ নির্ধারিত ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং’ সুবিধা চূড়ান্ত করছি।”
বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর উদ্যোগকেও এই বাণিজ্য সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে তুলে ধরা হয় চিঠিতে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি এই চিঠির মাধ্যমে আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আপনার বাণিজ্যিক এজেন্ডা পূর্ণ সমর্থনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।”
এরপর নতুন অর্থবছরের বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রের কথা মাথায় রেখে শতাধিক পণ্যে শুল্ক কমানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি থেকে তরল গ্যাস বা এলএনজি আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, দেশটি থেকে তুলা আমদানি সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি চলছে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা।