যুদ্ধ বন্ধে ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমওদের যে উদ্যোগ তা পাকিস্তানই নিয়েছিল
লোকসভায় তা জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং
অপারেশন সিঁদুর স্থগিত রাখা বা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল না, সে কথা সরাসরি দাবি করল না ভারত। যুদ্ধবিরতি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কনীতিকে হাতিয়ার করেছিলেন কি না, তা নিয়েও ভারত সরাসরি কোনো মন্তব্য করল না। আজ শুক্রবার লোকসভায় এ–সংক্রান্ত লিখিত প্রশ্নের জবাবে ভারত সে কথারই পুনরাবৃত্তি করেছে, যা এত দিন ধরে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে। ভারত বলেছে, সেই উদ্যোগ পাকিস্তানই নিয়েছিল।
তৃণমূল কংগ্রেসের মালা রায় ও দীপক অধিকারীসহ লোকসভার পাঁচজন সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ–সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন করেছিলেন। তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ওই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল কি না, সেই ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল কি না, সেই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল কি না এবং থাকলে কেমন। প্রশ্ন কর্তারা এ কথাও জানতে চেয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশের শুল্কনীতিকে হাতিয়ার করেছিলেন কি না। এই প্রশ্নও করা হয়, কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে ভারত যে তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতার বিরুদ্ধে, সে কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে কি না। আজ লিখিতভাবে সেসব প্রশ্নের জবাব দেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং।
প্রশ্নগুলোর জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেই উত্তরই দিয়েছেন, যা ভারত সরকার আগে থেকেই বলে আসছে। কীর্তি বর্ধন সিং বলেছেন, ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। দুই দেশের ডিজিএমওরাই সেই সিদ্ধান্ত নেয়। সেই উদ্যোগ পাকিস্তানই নিয়েছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উত্তরে বলেন, ৮ মে তারিখেই ভারতের উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি’ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তিনি এ কথাও জানান, ২২ এপ্রিল পেহেলগামকাণ্ড থেকে ১০ মে পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারত কূটনৈতিক আলাপ–আলোচনা চালায়। সেই দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও ছিল। প্রত্যেককেই একটি কথাই বলা হয়েছিল, ভারত যা করেছে, তা মেপে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী উত্তরে জানিয়েছেন, ৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্সকে জানানো হয়েছিল, পাকিস্তান আক্রমণ করলে ভারত তার যোগ্য জবাব দেবে। সেই আলোচনায় বাণিজ্যের বিষয়টি আসেনি।
কীর্তি বর্ধন সিং আরও বলেন, ভারত–পাকিকস্তান সমস্যার সমাধান দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই হবে। এটাই ভারতের দীর্ঘকালীন অবস্থান। সেই অবস্থানের বদল ঘটেনি। তিনি জানিয়েছেন, এই অবস্থানের কথা সব দেশকেই জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সে কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকেও জানিয়ে দিয়েছেন।
লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এখনো বারবার দাবি করছেন যে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকে তিনিই যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছেন, তা করতে দুই দেশকেই তিনি শুল্কনীতির চাপ দিয়েছিলেন। ভারত এখনো স্পষ্ট করে বলেনি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি অসত্য কিংবা তিনি অসত্য কথা বলছেন। লোকসভার লিখিত উত্তরেও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সরাসরি সে কথা বলেননি।