বাজেট ঘোষণা করে পরদিনই অর্থ উপদেষ্টা কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব করেছিলেন বাজেটে তা পুর্নবিবেচনার কথা বলেছেন বাজেটত্তোর সংবাদ সম্মেলনে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ‘বৈষম্যবিরোধী’ চেতনার বাজেটেও অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা যে ‘ভালো কিছু হয়নি’তা কবুল করলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বিগত সময়গুলোতে যখন বাজেটে এই প্রস্তাব থাকতো তখন সাবেক গভর্নর হিসবে সালেহ উদ্দিন আহমেদ আর এখনকার গভর্নর আহসান এইচ মনসুর টকশোতে জোরের সঙ্গেই কালো টাকা সাদা করার বিপরীতে নিজের নৈতিক অবস্থানের কথা বলতেন। তবে কি আমলাতন্ত্রের হাতে পড়ে আর গদির প্রভাবেই উল্টে গিয়েছিলেন দুজনই। বাইরে বসে সরকারের সমালোচনা আর নিজেরা বাজেট বানাতে বসলে উল্টো যাবার এমন পাল্টিবাজিই বুঝি মঙ্গলবার স্থান পেয়েছিলো বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বাজেট নিয়ে কার্টুন নামের কেরিক্যাচারে ।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর বাজেট সম্পর্কে বিশেষ জ্যাকেট পৃষ্টা জুড়ে ছাপা হয়েছে যে কার্টুন,সেখানে কার্টুনিস্ট খলিল অর্থ উপদেষ্টাকে বসিয়ে দিয়েছেন বাজেট ২০২৫-২৬ নামাঙ্কিত ব্রিফকেসে। যদিও এবার ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রী,থুক্কু সংসদ বা নির্বাচিত সরকার নাই তো কোত্থেকে আসবে মন্ত্রী,তবুও আগের মতই প্রশ্নবাণে মঙ্গলবার জর্জরিত হতে হয়েছে সালেহউদ্দিন আহমেদকে। এখন তো আবার প্রশ্ন করে চাকুরি হারানোর ভয়ও আছে সাংবাদিকদের। প্রথম আলোর ক্যারিকেচারেই দেখা যাচ্ছে গভর্নর বাস্কেট ভর্তি টাকা নিয়ে দাড়িয়ে থাকলেও তার সামনেই ব্যাংক গ্রাহকের দাবি “টাকা ফেরত চাই’’। আইএমএফর প্রেসক্রিপশন সামনে রেখেই বাজেট সাজানো হয়েছে সন্দেহ নাই। বিশ্বব্যাংকতো দুরবীণ দিয়েই দেখছে সব, কারণ ঋণের অর্থ ছাড় কিন্তু এখনো হয়নি। টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া আর শেয়ারবাজার ধ্বসের চিত্র কার্টুনে থাকলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তেমন আশার কোনো কথা উচ্চারণ করেনি অর্থ উপদেষ্টা, তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বিবৃতি দিয়ে বাজেটকে “পুজিবাজারবান্ধব’’ বলেছে।
প্রথম আলোর প্রধান খবরের শিরোনাম “বাজেট স্মল, কিন্তু বিউটিফুল নয় ’’ একটি বিখ্যাত অর্থনীতির বই থেকে নেয়া এই শিরোনামের মত করে কার্টুন এঁকেছেন এস এম রাকিবুর রহমান। তিনি এঁকেছেন ফু দিয়ে বেলুন বড় করছেন অর্থ উপদেষ্টা কিন্তু তাতে হাওয়া বের হবার আলপিন হচ্ছে বিনিয়োগ, খেলাপি ঋণ, মূল্যস্ফীতি আর চাকরি । খোঁচাটা সহ্য করেই সালেহ উদ্দিন প্রেস কনফারেন্সে দাবি করেছেন তার বাজেট নাকি ব্যবসাবান্ধব হয়েছে।
অন্য একটি পত্রিকার কাটুর্নে দেখা যাচ্ছে ভাঙ্গা রিক্সায় প্রধান উপদেষ্টাকে বসিয়ে বাজেট নিয়ে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা । মূল্যস্ফীতির বুলডোজারে চাপা পড়া আম পাবলিকেকেও দেখা গেছে বাজেটের কার্টুনে। অন্য একটি কার্টুনে দেখা গেলো দাবির চাপে উদ্বিগ্ন অর্থ উপদেষ্টা । কিন্তু তার পাশেই মাইক নিয়ে বিণিয়োগকারিদের ডাকছেন বিডার হাইফ্লাই নির্বাহি চেয়ারম্যান।
পেশায় চিকিৎসক হলেও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব হিসেবেই অর্ধিক পরিচিত ডা. আব্দুন নূর তুষার। তার ফেসবুক স্টাটাস দিয়ে শেষ করি এই কার্টুন বিশ্লেষণ । তিনি লিখছেন “দেশে তৈরী গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ওপর কর বাড়িয়েছে। দেশে সংযোজিত মোবাইল ফোনসেট এর ওপর। ব্লেড এর ওপর । রাইসকুকারের ওপর । ওয়াশিং মেশিনের ওপর । এবার ময়লা কাপড়ে থাকেন। দাড়ি কাটা বন্ধ করেন। ভাত না খেয়ে রুটি খান । কেমন যেন একটা আফগানি ভাব !” পৃথক স্টাটাসে লিখেছেন “ বাজে- ট ’’ । এও এক কার্টুনই বটে !