বিএনপি কেন বারবার ইউনুস ফাঁদে পা দিচ্ছে ?

ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়র সাংবাদিক আরশাদ মাহমুদ

1

বিএনপি কেন বারবার ইউনুস ফাঁদে পা দিচ্ছে ?

- Advertisement -

- Advertisement -

গতকাল কয়েকটি ঘটনা সংবাদের শিরোনাম ছিল।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দুই উপদেষ্টাসহ ইউনূসের সাহেবের প্রেস সচিব মাইলস্টোন স্কুলে বিক্ষোভকারীদের কাছে ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিল।

২। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সচিবালয় ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ৭৫ জন ছাত্র আহত হয়।

৩। গতকাল ছিল মাইলস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী নিহত এবং আহতদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস।

এই অশান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে হঠাৎ দেখলাম ইউনূস সাহেব বিএনপি জামাতসহ চারটি দলের সঙ্গে রাতে বৈঠক করেছেন। এদের মধ্যে জামাত এবং ইউনূসের সৃষ্টি করা জাতীয় নাগরিক পার্টি সরকারের সমর্থক বলেই ধরে নেওয়া হয়। ইসলামী আন্দোলন খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও তাদেরকেও ডাকা হয়। তারা ইউনূসের পক্ষেই সব সময় কথা বলে।

যা হোক বিএনপি বাদে অন্য দল গুলোর সঙ্গে আলোচনা খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না।

তবে আমার প্রশ্ন বিএনপি কেন এই আলোচনায় শরিক হলো? প্রশ্নটা এজন্য প্রাসঙ্গিক কেননা গত কয়েক মাস থেকে লক্ষ্য করছি বিএনপিকে কিভাবে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা যায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউনূস সাহেব। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জানাপ এবং জামাত একইভাবে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা করছে।

এ কারণেই বারবার মনে হচ্ছে এরকম একটা পরিস্থিতিতে বিএনপি আবার কেন ইউনূসের ডাকে সাড়া দিল।

ভেবেছিলাম হয়তো বিএনপি খুব জোরেশোরে নির্বাচন ফেব্রুয়ারি বা তার আগেই করার তাগাদা দিবে।

কিন্তু বৈঠকের পর উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য থেকে বুঝা গেল যে এটা ইউনূসের আরেকটা ধাপ্পাবাজি। নজরুল খুব জোর দিয়ে বলেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবাই একমত হয়েছে যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ স্বৈরাচারী হাসিনা বা আওয়ামী লীগকে কোন স্পেস দেওয়া যাবে না কোনভাবেই।

একটা জিনিস আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যখনই এই সরকার বেকায়দায় পড়ে তখনই ফ্যাসিবাদের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজায়। এটা মনে হয় তারা বুঝতে পারছে না যে এই ভাঙ্গা রেকর্ড শুনতে শুনতে মানুষ এখন বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ।

এর জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখলাম গতকাল দুই উপদেষ্টার নয় ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার মধ্যে। তাদের ভাগ্য ভালো যে বিক্ষোভকারীরা তাদের জুতা পেটা করে নাই। এরা যে কতটা অজনপ্রিয় এবং ঘৃণিত তা তারা হয়তো বুঝতে পারছে না। এটাই হলো ক্ষমতাসীনদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। ফ্লাগ ওয়ালা গাড়ি; মন্ত্রী পাড়ায় বাড়ি আর পাইক পেয়াদা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে এরা বাস্তবতা কখনোই বুঝতে পারে না। গত ৫০ বছর থেকে এই একই ব্যাপার লক্ষ্য করছি।

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে পুলিশ বা সেনা প্রোটেকশন ছাড়া বর্তমান উপদেষ্টারা বাইরে গেলে নিশ্চিতভাবে লাঞ্ছিত হবে।

যা হোক এবার আসি বিএনপির বৈঠকে অংশ নেওয়া নিয়ে। আমার সঙ্গে বিএনপি’র কোন নীতি নির্ধারকের যোগাযোগ নেই। খুব স্পষ্ট করে বলে রাখি আমি বিএনপির কোনো সমর্থক না। আমি তাদের কঠোর সমালোচক। এটা খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান খুব ভালোভাবে জানে। তারা ক্ষমতা থাকা অবস্থায় আমার লেখালেখির কারণে এক পর্যায়ে আমি তাদের রোশানালে পড়ি। ফলশ্রুতিতে ২০০২ সালে আমি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হই। সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একজন ডাকসাইটে সিএসপি কর্মকর্তা (যিনি আমার পুরনো বন্ধু) আমাকে একদিন বললেন আপনি তাড়াতাড়ি দেশ ছেড়ে চলে যান। এরা কিন্তু আপনাকে ক্রসফায়ারে দিয়ে মেরে ফেলবে।

আমি এখনো মনে করি বিএনপি একটা অত্যন্ত সুবিধাবাদী দল। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তেমন কোন পার্থক্য দেখি না। তবে সুষ্ঠ্, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলে আমার কোন আপত্তি নেই।

তারা যেহেতু এখনো নির্বাচনী মাঠে অন্যান্য দল থেকে অনেক এগিয়ে এজন্য যেভাবে হোক তারা নির্বাচন চায়। গতকাল তাদের বৈঠকে অংশ নেওয়া ছিল এই strategyর অংশ। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমির খসরু মাহমুদ নির্বাচনের ব্যাপারে বৈঠকে জোর দিয়েছেন। কিন্তু আসিফ নজরুলের বক্তব্যে সেটা খুব যেনতেন ভাবে বলা হয়েছে।

বিএনপি কোনভাবেই চায়না দেশে এখন কোন অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হোক এবং সেই সুযোগে অন্য কেউ এসে ক্ষমতা দখল করুক। তারা অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশবাসীকে বুঝাতে চেষ্টা করছে বিএনপি একটা গণতান্ত্রিক দল এবং নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। মোদ্দা কথা হল তারা ১৭ বছর সংগ্রাম করে ক্ষমতায় যাওয়ার দ্বার প্রান্তে এসে এমন কিছু করবে না যেটা তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেবে।

তবে আমার ধারণা নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না। এটা আমি আগেও লিখেছি এবং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছি।

ইউনূসের গত প্রায় ১১ মাসের যে কার্যকলাপ সেটাতে মোটামুটি পরিষ্কার যে তিনি বাধ্য না হলে ক্ষমতা ছাড়বেন না। সে যে একটা চরম সুবিধাবাদী এবং স্বার্থপর ব্যক্তি সেটা এখন দেশের জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইউটিউবে তার সম্পর্কে কি বলা হচ্ছে সেটা দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।

লোকটা যে কি লেভেলের ধান্দাবাজ এটা গতকালকে আরো পরিষ্কার হয়েছে। জাতীয় শোক দিবসের দিনে তাকে দেখলাম হেসে হেসে জুস খাচ্ছেন। তার আগে মাইলস্টোন স্কুলে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য তার দপ্তর থেকে চান্দা চেয়ে একটা ব্যাংক একাউন্টের নম্বর দিয়েছে।

You might also like