‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে’ নির্বাচনের এমন ধোঁয়াশা কাটানোর জন্যই হয়তো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অনেকটা আকস্মিকভাবেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন । ড. মুহম্মদ ইউনূসের এই ভাষণের একটাই উল্লেখযোগ্য দিক আর তা হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হিসেবে একটি মাসের নাম উল্লেখ করে জাতিকে আশ্বস্ত করা যে তিনি এরপর আর সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকতে চান না। ভাষণে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশীদের যুক্তকরার বিরোধিতাকারিদের ‘প্রতিহত করার’ ঘোষণাটি আলোচনায় থাকছে না। বরং এখানে ভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়াই তুলে ধরা হচ্ছে । আর তাতে দেখা যাচ্ছে বিএনপি এবং বামপন্থী দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নেতিবাচক অবস্থান জানালেও তার সমর্থনে এগিয়ে এসেছে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মীয় দল এবং গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি ।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরপরই বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠকে বসেছিল শুক্রবার রাতেই, যেখানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফলে এরপর বিএনপির যে বক্তব্য তা দলের শীর্ষনেতার অনুমোদন রয়েছে বলেই ধরে নেয়া যায়। ‘এপ্রিলের প্রথমার্ধ’ ভোটের জন্য উপযোগী নয় বলেই মনে করছে এই সময়ে সক্রিয় দেশের সবচেয়ে বড় রাজীনতিক দলটি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদের দিন সকালে স্পষ্ট করেই বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বরেই সম্ভব এবং সেটিই দেশের জন্য উপযোগী হবে। আর প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য নির্বাচনী সময়কে স্বাগত জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী ।
শুক্রবার রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব যখন প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতি সন্তুষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন,তার পরপরই জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, “প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে।” প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরপরই গণমাধ্যমে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়কও ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন।
শুক্রবার রাতে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর আনুষ্ঠানিকতা শেষে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসবে। তারপরও যদি ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই এসব বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় ‘শুধু বিএনপি নয়, গোটা জাতি হতাশ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে শুক্রবার রাতে দেশে ফেরার পর বিমান বন্দরেই এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
অন্যদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারি জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আমরা বলেছিলাম, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে না পারলে তার কারণ সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট হওয়া দরকার। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় হিসেবে এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা উল্লেখ করেছেন, যে সময়টি প্রতিকূল আবহাওয়া, পাবলিক পরীক্ষা এবং এর আগে রোজা— সব মিলিয়ে নির্বাচনের জন্য কতটা অনুকূল ও বাস্তবসম্মত হবে, সে ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আরও আলোচনা ইতিবাচক হবে বলে আমরা মনে করি।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশনকে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা বলা হবে এবং তার আগে অবাধ গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করবেন। এটা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, কেন কালক্ষেপণ করে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে কী কী কাজ করতে চান তা-ও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
সব মিলিয়ে আরও অধিক সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনজীবনের সঙ্কটেই ঘনীভূত হবে বলে আমরা মনে করছি।
বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রশ্ন তুলেছেন “ প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বোঝাতে পারেন নাই কেন নির্বাচন ডিসেম্বরে নয়?”
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো হতাশ হবে। তার ভাষ্য, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের দাবিগুলো তেমন করে আমলে নেন নাই। আবহাওয়া ও রোজার মাস বিবেচনায় এপ্রিল মাস ভোটের জন্য উপযুক্ত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রব্বানী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে দিন ঘোষণা করেছেন তা সঠিক নাকি ভুল এই বিবেচনা দেশবাসী করবেন। তবে একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করি, এপ্রিল থেকে দুই-এক মাস আগেও নির্বাচন হতে পারে। তবে সেটি প্রধান উপদেষ্টা পুনরায় বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশা করি।
বরাবরই নির্বাচনমুখী দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর আগেও অনেক নির্বাচনে অংশ নেয়া দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার যে কুয়াশা রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলো তা আজকে কেটে গেছে। ফলে সংস্কার ও বিচারের কাজে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার যে আহবান তিনি করেছেন তাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরাবরের মতো সাড়া দেবে।
You might also like

সম্পাদক :মোঃ শাহজালাল
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
You cannot print contents of this website.