লন্ডনের টেমসের পাড় থেকে সুবাতাসের অপেক্ষায় !

সংবাদ বিশ্লেষণ

33

বলা যায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের দৃষ্টি এখন লন্ডনের টেমসের দিকে ।  আর সকলেই কান খাড়া করে আছেন  নিজ নিজ সুবিধামত কিছু শোনার জন্য। তবে বিষয়টা অনেকটাই উপরের ছবিটির মতই । এটা আধুনিক প্রযুক্তি এআই-এর মাধ্যমে তৈরী করা ছবি। হটাৎ দেখলে কেউ আৎকে উঠতে পারেন, যে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আর বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক কি এতটাই ফলপ্রসু যে দুজন বৈঠকের পর হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন লন্ডনের বিখ্যাত টাওয়ার ব্রিজের কাছে টেমসের পাড়ে ! না মনে হয়না বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো সুবাতাস বইয়ে দিবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে ।

- Advertisement -

- Advertisement -

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূসের  সঙ্গে ডরচেস্টার হোটেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্রান তারেক রহমানের বৈঠকটি হবে রুদ্ধদ্বার। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন যে বৈঠকের নিদৃষ্ট কোনো এজেন্ডা নাই। আবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ লন্ডনে গিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।  দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য এরই মধে আলোচিত বৈঠকটিকে রাজনিতর টার্ণিং পয়েন্ট বা নতুন দিগন্তের সূচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। আর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গনমাধ্যমকে বলেছেন , ‘গোটা জাতি আজ লন্ডনের দিকে তাকিয়ে। বিশ্বাস করি-এটি হবে ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে।’ সাবেক মন্ত্রী ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের দিনক্ষণের ধোঁয়াশা কেটে যাবে।

অন্যদিকে এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক লন্ডন সফরে বিএনপিপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে সরকারের তৎপরতা এবং মিডিয়ায় উচ্চমাত্রার প্রচার রাজনৈতিক অঙ্গনে একক ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার অনাকাঙ্ক্ষিত ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রাজনৈতিক মহলে আশাবাদীরা মনে করেন বৈঠক থেকে নির্বাচন এগিয়ে আসার সম্ভাবনা দেখা দিবে , আগ বাড়িয়ে কেউ বলছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে দুজন একমত হতে পারেন। নির্বাচনের পরে একটি জাতীয় সরকার গঠন করে অংশগ্রহনকারী দলগুলোকে ক্ষমতার সঙ্গে নেযার ব্যাপারেও উভয়পক্ষ সিদ্ধান্তে উপনীত হবার কথাও বলছেন কেউ কেউ। আর এমনও আলোচনা আছে যে নির্বাচনের পরে নিজের সম্মানজনক বিদায়ের নিশ্চয়তা চাইবেন অধ্যাপক ইউনূস । আগ বাড়িয়ে একথা বলতেও কেউ দ্বিধা করছেন না যে প্রধান উপদেষ্টা পরবর্তি সরকারের রাষ্ট্রপতি হবার ইচ্ছাও জানাতে পারেন তারেক রহমানকে। যদিও এরই মধ্যে ড. ইউনূস জানিয়েছেন যে পরবর্তি সরকারের অংশ হতে চাননা তিনি। এসবই জল্পনা রাজনীতির টেবিলের গরম কাপের ধোয়াময় আলোচনায়।

একজন সরকার প্রধান এবং একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতার মধ্যে রুদ্ধদ্বার একান্ত বৈঠকের ভেতরের আলোচনা কতটুকু প্রকাশ পাবে , তা নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া ঠিক নয় । আমরা জানিনা বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে তার প্রেস সচিব কতটা প্রকাশ করবেন,কতটা তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাবে তা নিয়ে ধোয়াশাতো থেকেই যায় । তবে দেশের রাজনৈতিক মহল আশা করতেই পারে যে বৈঠক শেষে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে একজন এবং প্রেস সচিব যৌথ একটি সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি আকারেও তারেক রহমানের অবস্থান জানান দেয়া সম্ভব । নতুন করে যেন কোনো ধোয়াশার সৃষ্টি না হয়,যেমন হয়েছে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক নিয়ে।  শুক্রবার লন্ডন থেকে বৈঠক শেষে খবর না আসা পর্যন্ত রাজনৈতিক মহল এবং গনমাধ্যমের সজাগ থাকাটাই এখন প্রধান বাস্তবতা। আর সেই বাস্তবতায় রাজনীতির সুবাতাস নাকি টার্ণিং পয়েন্টের মত কিছু হবে , সেজন্য এআইয়ের কল্পনাপ্রসূত ছবির মতই অবাক বিস্ময় নিয়েই অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো কয়েক ঘন্টা।

You might also like