নোয়াখালীতে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ সড়ক, আবারও বন্যার আশঙ্কা

1

টানা বর্ষণ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে গেছে বিভিন্ন অফিস আদালতও। এমন পরিস্থিতিতে জেলার পাঁচ উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও পরীক্ষা স্থগিত বুধবার ও বৃহস্পতিবার (৯ ও ১০ জুলাই) পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

- Advertisement -

- Advertisement -

বুধবার (৯ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

নোয়াখালীতে গত দুই দিনের টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কাঁচা ও আধা-পাকা সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও আবার কোমর পানি জমে জনজীবনে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ স্থবিরতা। তাই নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর, সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ও চলমান অর্ধ-বার্ষিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বাকি চার উপজেলায় পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নোয়াখালীর সদর উপজেলার মাইজদী হাউজিং এলাকার সিয়াম নামে এক বাসিন্দা বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে পুরো জেলার বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হতে পারছে না। সারা দিনের বৃষ্টিতে শহরবাসী অনেকটা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় চারপাশে পানি জমায় অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে গেছে।

নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট ও বসতবাড়ি নির্মাণ, রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে বর্ষার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলো অধিকাংশই পানির নিচে ডুবে গেছে। অনেকের আবার বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি এসব মানুষদের অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

মাইজদী গোদার মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মাহাবুবুল হাসান চৌধুরী রাসেল জানান, গত বছর বন্যা হওয়ার পরও নোয়াখালীর প্রশাসন তা থেকে কোনও শিক্ষা নেয়নি। এক বছর হাতে সময় পেয়েও তা কেউ কাজে লাগায়নি। এই এক বছরে যদি নোয়াখালীর অবৈধ স্থাপনা করা উচ্ছেদ করা যেত, ড্রেনের সিস্টেমগুলো যদি সচল করা যেতো তাহলে হয়তো এত অল্প সময়ের মধ্যে আবারও বন্যার মুখোমুখি আমাদের হতে হতো না। গত বছর বন্যায় নোয়াখালী শহরের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছর না ফিরতেই আবারও তারা ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা গতকাল দিনভর বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে দেখেছি, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে গেছে। শ্রেণি কক্ষগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়েই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও পরীক্ষা বুধবার ও বৃহস্পতিবার (৯-১০ জুলাই) পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্থগিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি পরবর্তীতে জানানো হবে।

নোয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে নোয়াখালীতে আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। এতে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, এক বছর না যেতেই আবারও বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে নোয়াখালীর মানুষ। বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাই খুবই উদ্বিগ্ন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। অনেকগুলো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে আসার পরপরই আবারো স্থানীয়রা সেগুলো দখলে নিয়ে যায়। এক একটি অবৈধ স্থাপনা একাধিকবার উচ্ছেদ করেও কার্যত কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত স্থানীয়রা সচেতন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন যত উচ্ছেদ অভিযানই করুক এর সুফল আসবে না। আমরা চাই, স্থানীয় জনগণ আমাদের সহযোগিতা করুক। অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি বন্যার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি।

You might also like