কাদের মদদে পোশাক নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, জানতে চান অনেকেই
বাংলাদেশ ব্যাংকের পোশাক সংক্রান্ত নির্দেশনা সম্পর্কে সংবাদ বিশ্লেষন
পোশাক সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নির্দেশনা প্রত্যাহার করলেও এ নিয়ে সমালোচনা থামছেনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র নিজে গনমাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। খবরে প্রচার পেয়েছে যে বিদেশে অবস্থানরত গর্ভণর আহসান এইচ মনসুর নির্দেশনা জারির খবরে নাকি ক্ষুদ্ধ হয়ে পোশাক সম্পর্কিত সার্কুলারটি বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছে। এখন ফেসবুক ও গনমাধ্যমে সবাই প্রশ্ন তুলছেন কেন এবং কারা এই উদ্যোগের পিছনে ছিলেন ? কাদের মদদে পোশাক নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা জানতে চেয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী । এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা: ফওজিয়া মোসলেম জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মত অফিসে কেউ অশালীন পোশাক পরে যায় নাকি ? বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহি পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মন্তব্য করেছেন “ বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ কেন এমন নির্দেশনা দিয়েছিল, তা দেখার বিষয়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সংবাদ রাত ১০ টার দিকে বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে । নানা নেতিবাচক মন্তব্যের পাশাপাশি ফেসবুকে অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভণর আহসান এই মনসুরের মডেল মেয়ের খোলামেলা পশ্চিমা পোশাকের ছবিও আপলোড করে । পরের দিনই অবশ্য নির্দাশনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয় । কিন্তু সমালোচনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। নিচে কয়েকটি মন্তব্য দেযা হলো।
ফওজিয়া মোসলেম
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা: ফওজিয়া মোসলেম জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মত অফিসে কেউ অশালীন পোশাক পরে যায় নাকি ? পোশাক নিয়ে এ ধরনের নির্দেশনা আগে কখনো দেখেনি । তবে এখন সবকিছু মিলিয়ে এটা বোঝা কঠিন হচ্ছে না যে কেন এই নির্দেশনা এসেছে। এখন একটা সংস্কৃতির বলয় তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই বলয় তৈরির প্রতিফলন থেকেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাশেদা কে চৌধুরী
বাংলাদেশ ব্যাংক তার নারী ও পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী পোশাক পরবেন, কী পোশাক পরবেন না, তা ঠিক করে দিয়েছে—বুধবার এ–সংক্রান্ত সংবাদ দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। আরও বেশি মতামতের ঝড় ওঠার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। সে কারণে কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই।
তবে পোশাক নিয়ে অগ্রহণযোগ্য নজির স্থাপনের যে চেষ্টা করা হলো, তা মনে অনেক আশঙ্কা ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারা, কী উদ্দেশ্যে, কেন, কার অঙ্গুলিহেলনে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন? বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কি না। কোনো অপশক্তির মদদ ছিল কি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অজান্তে যে কেউ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না। এসব প্রশ্ন থেকে যায়। যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তাঁরা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর আজ্ঞাবহ কি না, দেখা দরকার।
ফাহমিদা খাতুন
পোশাক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করার বিষয়টি ভালো উদ্যোগ। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। পোশাকের নির্দেশনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হচ্ছিল।
অফিস–আদালত একটি আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের জায়গা। অফিসের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কী ধরনের মানানসই পোশাক পরবেন, সে বিষয়ে কোনো কোনো জায়গায় মোটাদাগে কিছু নির্দেশনা থাকে। পৃথিবীর বহু দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে পোশাক–পরিচ্ছদ নিয়ে লিখিত কিছু থাকে না। তবে সেখানে আনুষ্ঠানিক মানানসই পোশাক পরেন কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। অনেক সময় ব্যক্তি খাতে বা করপোরেট খাতে পোশাক বিষয়ে নির্দেশনা থাকে।
কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই অনেক অফিসে লিখিত কিছু থাকে না। কিন্তু অলিখিত সুপারিশ ও কর্তৃপক্ষ থেকে প্রত্যাশা থাকে। তবে যাতে ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব না হয়, সেটিও খেয়াল রাখতে হয়। এটা তো সবাই জানেন যে জিনস, গ্যাবার্ডিন ও স্যান্ডেল—এসব পরে অফিস করা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকে হয়তো এত দিন এ বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা ছিল না। তাই এখন পোশাক–পরিচ্ছদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক তার কর্মপরিবেশে কিছুটা আনুষ্ঠানিক ভাব আনার জন্য এমন নির্দেশনা দিয়েছিল।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ কেন এমন নির্দেশনা দিয়েছিল, তা দেখার বিষয়। এই সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এমনিতেই মানানসই পোশাক পরেন। এ ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করা হয়েছিল কি না, তা–ও আমরা জানি না। তবে আমার ধারণা, এটি হয়তো শুধু সুপারিশ ছিল, নির্দেশনা নয়। আর এ ধরনের বিষয় কর্তৃপক্ষ থেকে সুপারিশ বা প্রত্যাশা পর্যায়ে থাকলেই ভালো।
শাহানা হুদা রঞ্জনা
কলামিস্ট ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক শাহানা হুদা রঞ্জনা তার ফেসবুক পেইজে মন্তব্য করেছেন “ এদিকে আমি একটু আগেই লিখেছিলাম যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আর কোন পরামর্শমূলক নির্দেশনা আছে কি? যেমন নারীদের ব্রা,প্যান্টি, টিপ, লিপিস্টিকের রং বা স্যানিটারি প্যাড এইসব নিয়া?
পুরুষের জিনস আর গ্যাভারডিন প্যান্ট কী দোষ করলো, এইটাও পষ্ট নয়। ফাইজলামির একটা সীমা থাকা দরকার।আমার শংকা বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা নিঃসন্দেহে অচিরেই অন্য ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।”
আজমেরি হক বাধন
অভিনেত্রী আজমেরি হক বাধন ফেসবুক পেইজে দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘কিন্তু জানেন কি? আমার আর কিছু যায় আসে না। আমি স্বাধীন। আমাকে কী পরতে হবে, কী বলতে হবে, কী ভাবতে হবে বা কীভাবে বাঁচতে হবে—তা বলার অধিকার কারো নেই। এটা আমার সিদ্ধান্ত, একান্তই আমার।’
বাঁধন বলেন, ‘এই ধরনের জাজমেন্ট আমাকে খুব হতাশ করে, বিরক্ত করে তোলে। কিন্তু এই ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা নারীরা প্রতিদিন হই। এই সমাজে মানুষের একটাই লক্ষ্য বলে মনে হয়: নারীদের সংশোধন করা। যেন এটাই স্বর্গের সবচেয়ে বিশুদ্ধ পথ!’
দেশের নারী সমাজই বেশি প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা সম্পর্কে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন এর পিছনে মৌলবাদীদের প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে একজন নারী ডেপুটি গর্ভণর আছেন। তিনি বা গর্ভণরের চোখ এড়িয়ে এমন র্স্পশকাতর একটি নির্দেশনা কিভাবে জারি হলো সেও এক বড় প্রশ্ন । প্রগতিমনা গর্ভণর কি দেশের ফিরে কোনো তদন্তের নির্দেশ দিবেন ?