যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন তুলতে যাচ্ছেন টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক। কর ও ব্যয়ের নীতিকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন এই বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (যার মালিক স্বয়ং মাস্ক) দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “ট্যাক্সদাতাদের অর্থ নষ্ট এবং মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার দিক থেকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট— দুই দলই সমান। আসলে আমরা একদলীয় ব্যবস্থায় বাস করছি, গণতন্ত্রে নয়।”
নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও লেখেন, “আজ ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হলো- আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।”
তবে দল গঠনের প্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি মাস্ক। তিনি শুধু ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য মধ্যবর্তী নির্বাচনে এর প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ দেখা যেতে পারে। ওই নির্বাচনে সিনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৩টি এবং হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সবগুলো ৪৩৫টি আসনেই ভোট হবে।
একটি রাজনৈতিক দল জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেতে হলে তাকে একটি পলিটিক্যাল পার্টি কমিটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ফেডারেল ইলেকশন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হবে।
একটি ফলো-আপ পোস্টে গ্রীক উপকথার উদাহরণ টেনে মাস্ক বলেন, “আমরা একদলীয় ব্যবস্থার (ইউনিপার্টি) ভাঙন ঘটাবো এপামিনন্দাস যেভাবে লিউকট্রার যুদ্ধে স্পার্টার অজেয়তার মিথ ভেঙে দিয়েছিলেন: অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত শক্তি প্রয়োগ করে যুদ্ধক্ষেত্রের সুনির্দিষ্ট স্থানে।”
গত মাসেই মাস্ক প্রথম ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ধারণা প্রকাশ করেন। এ সপ্তাহে তিনি সেই পরিকল্পনা আবারও সামনে আনেন এবং শনিবার তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, এ সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন ট্রাম্পের বহুল আলোচিত বহু ট্রিলিয়ন ডলারের কর ও ব্যয় পরিকল্পনার প্রতিবাদে।
“যদি এই পাগলামিপূর্ণ ব্যয়ের বিল পাস হয়, তাহলে পরদিনই আমেরিকা পার্টি গঠিত হবে”—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মাস্ক গত সপ্তাহেই।
‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামের এই বিলটি ট্রাম্প শুক্রবার স্বাক্ষর করেন। এতে প্রেসিডেন্টের সীমান্ত ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত এজেন্ডার জন্য শত শত বিলিয়ন ডলারের নতুন ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
একইসঙ্গে এতে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ভর্তুকিতে বড় ধরনের কাটছাঁটও করা হয়েছে—যার সুবিধাভোগী ছিল মাস্কের কোম্পানি টেসলা।
বিল স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা আগেই মাস্ক এক্স অনুসারীদের কাছে দল গঠনের বিষয়ে মতামত চান। পরদিন শনিবার তিনি জানান, “২:১ অনুপাতে তোমরা চাও একটি নতুন রাজনৈতিক দল— এবং তোমরা এটা পাবে।”
তবে এই পথে মাস্ককে এখনও বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিজ্ঞ নির্বাচন আইনজীবী ব্রেট ক্যাপেল বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে রাজনৈতিক দলকে স্বীকৃতি দেওয়ার আইন আলাদা। নতুন দলগুলোর জন্য এসব বাধা অনেক রাজ্যে ‘উচ্চ’ থেকে ‘অত্যন্ত কঠিন’ পর্যন্ত হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি জাতীয় দল তৈরি করতে বহু বছর লেগে যেতে পারে।”
বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকান রাজনীতির মূলধারায় মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ আদৌ কীভাবে প্রবেশ করতে পারে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে মাস্কের মত প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি রাজনৈতিক মঞ্চে সরাসরি অবতীর্ণ হওয়াটা নিজেই একটি যুগান্তকারী ঘটনা।