৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে, ব্যাংককে ধসে পড়ল বহুতল ভবন

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয়ের কাছে। ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।

44

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয়ের কাছে। ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় ভবন ধসে পড়ার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

- Advertisement -

- Advertisement -

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ব্যাংককে নির্মাণাধীন ৩০ তলার একটি আকাশচুম্বী ভবন ধসে পড়েছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারে ভবন ধসে পড়ার পর ক্ষমতাসীন জান্তা কিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, মধ্যাহ্নভোজের সময় আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭.৭ এবং এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার (৬ দশমিক ২ মাইল)। এরপর একটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের মান্দালয় শহর থেকে প্রায় ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরে। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিয়ানমারের তাউঙ্গু শহরে একটি মসজিদ আংশিকভাবে ধসে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। অং বান শহরে একটি হোটেল ধসে কমপক্ষে দুইজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন।

থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইমার্জেন্সি মেডিসিন জানিয়েছে, নির্মাণাধীন আকাশচুম্বী ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কমপক্ষে একজন নিহত এবং কয়েক ডজন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে।

ব্যাংককের শহর কর্তৃপক্ষ রাজধানীকে দুর্যোগপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করা এবং যারা এখনও ঝুঁকিতে থাকতে পারে তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন।

ব্যাংককে মানুষ আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসার সময় হোটেলে থাকা পর্যটকদের অনেকে বাথরোব এবং সাঁতারের পোশাক পরা ছিলেন।

মায়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে জান্তা সরকার বলেছে, “সরকার দ্রুত পরিস্থিতির তদন্ত করবে। মানবিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি উদ্ধার অভিযানও চালানো হবে।”

মান্দালয় মিয়ানমারের প্রাচীন রাজকীয় রাজধানী এবং দেশের বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্রস্থল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ছবিতে শহরের রাস্তায় ধসে পড়া ভবন এবং ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে পোস্টগুলো যাচাই করতে পারেনি।

শহরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, “সবকিছু কাঁপতে শুরু করার সাথে সাথে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। আমি আমার চোখের সামনে একটি পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে এবং কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।”

শহরের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী থেত নাইং ওও রয়টার্সকে বলেন, “একটি চায়ের দোকান ধসে পড়েছে এবং বেশ কয়েকজন লোক ভিতরে আটকা পড়েছে। আমরা ভেতরে যেতে পারিনি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।”

দুই প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাউঙ্গুতে একটি মসজিদ আংশিকভাবে ধসে পড়ার পর কমপক্ষে তিনজন মারা গেছেন।

“আমরা যখন কম্পন শুরু হচ্ছিল তখন নামাজ পড়ছিলাম… তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান,” রয়টার্সের সাথে কথা বলা দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন বলেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শান রাজ্যের অং বানে একটি হোটেল ধ্বংসস্তূপে ধসে পড়েছে। এতে দুইজন মারা গেছেন এবং ২০ জন আটকা পড়েছেন।

মিয়ানমার নাউয়ের পোস্ট করা ভিডিও এবং ছবিতে রাজধানী নেপিদোর একটি বাজারে একটি ছাদের ফাটল দেখা গেছে।

মান্দালয়ে একটি ঘড়ি টাওয়ার ধসে পড়েছে এবং মান্দালয় প্রাসাদের দেয়ালের কিছু অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

চীনের সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনান প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।”

মায়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে যোগাযোগ করা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অনেক লোক ভবন থেকে বেরিয়ে এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে একটি অফিস ভবন কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে এদিক-ওদিক দুলছিল।

হতবাক এবং আতঙ্কিতরা শত শত কর্মী জরুরি সিঁড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসেন। ভবনটি দুলতে থাকা অবস্থায় জোরে চিৎকার শোনা যাচ্ছিল।

চীনের সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনান প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

You might also like