ইলিয়াস কাঞ্চনের দল জনতা পার্টি বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ

21

‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে আরও একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে, যার চেয়ারম্যান হয়েছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মহাসচিব সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, যিনি দুই বছর আগে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছেন।
শুক্রবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নতুন দলের ঘোষণা দেন শওকত।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পর ওইসব সংগ্রামী চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অভ্যুদয় ঘটে। যেহেতু রাষ্ট্র সাজবে একাত্তর ও চব্বিশের গণজাগরণের চেতনায়, সেই আঙ্গিকে নতুন দলের আবির্ভাব অনিবার্য।
“জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় প্রত্যাশায় সকল প্রকার বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে- জনকল্যাণ, ইনসাফ ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দৃঢ়করণ করতে আমরা আজ নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করছি।”
শওকত মাহমুদ বলেন, “মোটা দাগে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান- সর্বোপরি ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের চেতনায় আমরা জনতা পার্টি বাংলাদেশ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“আমাদের মূল স্লোগান হবে- গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ। সাম্য, মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশকে বিনির্মাণের সফল অভিযাত্রায় আমরা এগিয়ে যেতে চাই।”
দলের ১৮ দফা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অন্যান্য দলের তুলনায় আমাদের পার্থক্য হবে নিখাদ দেশপ্রেম, চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছতা ও সাহসিকতা, দলের ভেতরে-বাইরে গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা, উচ্চারণে-কর্মে-জনসেবায় অভিন্ন লক্ষ্যাভিসারী হওয়া। জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা ও নীতিনির্ধারণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।
“প্রবীণদের পরামর্শে, প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে ও উন্নয়নের আমরা জাতিকে তুলে দিতে চাই প্রত্যাশার নব সোপান।”
শওকত বলেন, “সত্যিকার অর্থে দেখতে চাই, ইনসাফ সমৃদ্ধ দৃঢ় সার্বভৌমত্বে বলীয়ান নতুন শক্তি হিসেবে এক নিরাপদ বাংলাদেশকে।”
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “৩২ বছর নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনে যেভাবে আমি সততার সঙ্গে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, আমি নতুন এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এদেশের জন্য সততার সঙ্গে কাজ করতে চাই।
“আমি আশা করবেন, আমাকে সহযোগিতা করবে, অনুপ্রাণিত করবেন, আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
পরে ইলিয়াস কাঞ্চন নতুন দলের কমিটি ঘোষণা করেন। তারা হলেন- নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র গোলাম সারওয়ার মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল হক হাফিজ, এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, রেহানা সালাম, মো. আবদুল্লাহ, এম এ ইউসুফ ও নির্মল চক্রবর্তী।
মহাসচিব শওকত মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম আসাদুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব এ বি এম রফিকুল হক তালুদার রাজা, আল আমিন রাজু, নাজমুল আহসান, সমন্বয়নকারী নুরুল কাদের সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ আহমেদ।
সম্মানিত সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত মেজর ইমরান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সাব্বির, প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক গুলজার হোসেন ও প্রচার সম্পাদক হাসিবুর রেজা কল্লোল।
উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা হলেন- শাহ মো. আবু জাফর, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মুজিব, ইকবাল হোসেন মাহমুদ, ফরহাদ হোসেন মাহবুব, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, আউয়াল ঠাকুর, তৌহিদা ফারুকী, মামুনুর রশীদ।
পরে এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে বলে জানান চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন দল আত্মপ্রকাশের আগে বৃহস্পতিবার তাকে আইনি নোটিস পাঠান ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টির’ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সবুজ খান।
দুটি দলের নামের মিলের কারণে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টির’ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে অভিযোগ করে ইলিয়াস কাঞ্চনকে তার দলের অন্য নাম দেওয়ারও অনুরোধ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “বাংলাদেশ আগে-পরে এরকম হতে পারে তো। এটা তো একই টাইপের নয়। না, এটাতে (দলের নামকরণ) কোনো কনফ্লিক্ট হওয়ার কারণ নেই।
“তারপরে আরও একটা কথা হচ্ছে, উনি (উকিল নোটিসকারী) যে নামটির কথা বলেছেন, সেই নামটি কি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হয়েছে? নির্বাচন কমিশনের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন? সেগুলো না জমা দিয়ে এগুলো করার কোনো মানে হতে পারে না।”
জনতা পার্টি বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র গোলাম সারওয়ার মিলন বলেন, “জাতীয় পার্টি নামে নিবন্ধন চারটা, জাসদের নামে চারটা নিবন্ধন। সুতরাং এখানে যারা জনতার নাম দিয়ে দল করেছেন, আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। চেয়ারম্যান সাহেব, উনি যথার্থ জবাব দিয়েছেন।
“নির্বাচন কমিশনে যখন নিবন্ধন হবে, যাকে দেবে, যে যোগ্যতা অর্জন করবে- সেই ফাইনালি থাকবে। পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, জনতার নাম দিয়ে ভবিষ্যতে তো এমনও হতে পারে- আমাদের চিন্তা-চেতনার সাথে এক হয়ে জাতীয় জনতার জোটও হতে পারে। এই নিয়ে বির্তকের কোনো অবকাশ নাই।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম এ আবদুল করীম, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান মহসিন রশীদ, জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান এ বি এম খন্দকার গোলাম মূর্তজা, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল নাজিম উদ্দিন, নৈতিক সমাজের প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসা আমিন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের মহাসচিব শাহ আহমেদে বাদল, গণআজাদী লীগের একাংশের সভাপতি আতাউল্লাহ খান, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, আমজনতা দলের দপ্তর সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, শহীদ আসাদের ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান নূর, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান কায়সার, লন্ডন প্রবাসী শেখ মহিউদ্দিন।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গোলাম সারওয়ার মিলন, আসাদুজ্জামান এবং জুলাই আন্দোলনে আহত ওয়াহেদ এবং নিহত পরিবারের সদস্য মিঠুন হাসান।

- Advertisement -

- Advertisement -