কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে স্ট্রিট ফেস্টিভ্যালে ভিড়ের মধ্যে গাড়ি হামলার ঘটনায় আরও তিনজন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে রবিবারের ওই ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়ালো ১১ জনে। আহত হয়েছে আরও অনেকে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনাটি শহরের দক্ষিণাঞ্চলের ইস্ট ৪৩ অ্যাভিনিউ ও ফ্রেজার স্ট্রিটে শনিবার রাত ৮টার দিকে ঘটে, যখন ‘লাপু লাপু ডে ব্লক’ পার্টি চলছিল। ওই এলাকায় হাজার হাজার মানুষ উৎসবে অংশ নিয়েছিল।
এই ঘটনায় জড়িত ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ডিগ্রির আটটি হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
কাই-জি অ্যাডাম লো নামের ওই ব্যক্তি ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী আগে থেকেই পুলিশের পরিচিত। তবে এ ঘটনায় চরমপন্থি কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন তারা। অভিযুক্তের মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার ইতিহাস রয়েছে।
নিহতদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাদের বয়স ৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। লাপু লাপু উৎসবের আয়োজকরা বলেছে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় ভ্যাঙ্কুভারের ঘনিষ্ঠ ফিলিপিনো কমিউনিটি শোকাহত।
চোখের সামনে গাড়ি তাণ্ডবের বর্ণনা দিয়েছে অনেক প্রত্যক্ষদর্শী। স্থানীয় বাসিন্দা আবিগেইল আন্দিসো জানান, “একটা গাড়ি সোজা পুরো রাস্তা ধরে চলে গেল, সবাইকে আঘাত করলো। আমি অন্তত বিশজনকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। চারপাশে হাহাকার আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।”
রবিবার ঘটনাস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসে অনেকে। তাদের মধ্যে ডোনা নামের এক নারী গণমাধ্যমে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। দীর্ঘদিনের স্থানীয় বাসিন্দা ডোনা বলেন, “এখানে সবাই উৎসবের আনন্দে এসেছিল। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা কেউ ভাবেনি।”
ফিলিপিনো বিসি সংগঠনের প্রধান আরজে অ্যাকুইনো বলেন, “গত রাত ছিল খুব কঠিন। আমাদের কমিউনিটি এই ক্ষত অনেকদিন বয়ে বেড়াবে।”
তিনি জানান, আতঙ্কের মুহূর্তে অনেকে একে অপরকে ফোন করে আপনজনের খোঁজ নিচ্ছিল।
ভ্যাঙ্কুভার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্টিভ রাই বলেন, ‘শহরের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে অন্ধকার দিন।” নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
গাড়ি নিয়ে হামলার পরপরই ওই গাড়ির চালককে ঘটনাস্থলেই উপস্থিত মানুষজন আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ভ্যাঙ্কুভারে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ফিলিপিনো বংশোদ্ভূত বাসিন্দা রয়েছে। লাপু লাপু উৎসবটি ফিলিপিনো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় বাৎসরিক উদযাপন। ফিলিপিনোর জাতীয় বীর লাপু-লাপুর স্মরণে আয়োজিত হয় এটি। এ বছর উৎসবে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অনুষ্ঠান শুরুর আগে হুমকি মূল্যায়ন করা হয়েছিল। তবে কোনো বিশেষ হুমকির ইঙ্গিত মেলেনি। যেখানে হামলা হয়েছে, সেই রাস্তার অংশটি খাবারের ট্রাকের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং সেখানে কোনো বাধা ছিল না।
পুলিশপ্রধান রাই বলেছেন, এই ঘটনা শহর কর্তৃপক্ষ ও জরুরি সেবা সংস্থাগুলোর জন্য এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে থাকবে।
এ হামলার পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি নির্বাচনী প্রচারের বড় একটি সমাবেশ বাতিল করেন। তিনি এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, “আমি মর্মাহত, বিধ্বস্ত।”
রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি মোমবাতি জ্বালিয়ে নীরবে শ্রদ্ধা জানান। পরে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ফুল দেন এবং একটি চার্চ সেবায় অংশ নেন।
কানাডার অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাও শোক প্রকাশ করেছে।
বিরোধী দলের নেতা পিয়েরে পোলিয়েভর নিজে উপস্থিত থেকে ফিলিপিনো কমিউনিটির প্রতি সহমর্মিতা জানান। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জাগমিত সিং- যিনি হামলার আগের দিন উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন- বলেন, “যেখানে এত আনন্দ, ইতিহাস আর সংস্কৃতির গর্ব ছিল, তা এভাবে ধ্বংস হতে দেখা হৃদয়বিদারক।”