রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে আপিলের রায় ঘোষণার জন্য ১ জুন দিন ধার্য করেছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বুধবার এই দিন ধার্য করেন।
আদালতে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। তাকে সহযোগিতা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও নাজিব মোমেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
শুনানি শেষে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, “জামায়াতে ইসলামী এদেশের অন্যতম বড় একটি দল। সকল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এবং সংসদীয় রাজনীতিতে জামায়াত অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত সঠিকভাবে যে কয়টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে- সব নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জামায়াতের এমপি, মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছে।
“আশ্চর্যজনক বিষয় হলো জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশন একটা নিবন্ধন ইস্যু করেন। কিন্তু বাংলাদেশের হাইকোর্ট মেজরিটি জাজমেন্টের ভিত্তিতে নিবন্ধনটি বাতিল করে। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছিলাম। আপিল মামলা আজকে শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে আগামী ১ জুন রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।”
শিশির মনির বলেন, “আমরা আজ আদালতকে বলেছি জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার মাধ্যমে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার মাধ্যেমে পলিটিসাইজিয়ান অব জুডিশিয়ারি (বিচার বিভাগ রাজনীতিকরণ) করা হয়েছে। এই মামলার শুনানি শেষে নিবন্ধন বাতিল করে মূলত বাংলাদেশের উচ্চ আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
“আদালত আমাদের আর্গুমেন্ট মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। আমরা প্রত্যাশা করব- এই আর্গুমেন্টের ভিত্তিতে আগামী ১ জুন জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরে পাবে। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী নতুন উদ্যোমে নতুনভাবে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
শিশির মনির বলেন, “প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করে। এই রেজ্যুলেশনের কারণে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। আজকে আমরা আদালতের কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বলেছি রাজনৈতিক দলের প্রতীক সুপ্রিম কোর্ট বরাদ্দ করতে পারেন না। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের। আদালত যেন এই বিষয়ে একটি অবজারভেশন দেন।
“নির্বাচন কমিশন যেন এ বিষয়ে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেন। আমরা আশা করি পূর্ণাঙ্গ রায়ে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।”
গত ১২ মার্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার প্রশ্নে আপিল শুনানি শুরু হয়।
৭ মে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার প্রশ্নে আপিল শুনানির জন্য ১৩ মে দিন ধার্য করা হয়েছিল। গতকাল এ বিষয়ে শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করে আদালত।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল মামলাটি খারিজ (আইনজীবী হাজির না থাকায়) করে দেয়। এরপর আপিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য আবেদন করা হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য পুনরুজ্জীবিত (রিস্টোর) করে।
ওইদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও শিশির মনির। এরপর ৩ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছিল।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানান।
রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে তৎকালীন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন।
জামায়াতের নিবন্ধন প্রশ্নে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।
২০১৩ সালের ১২ জুন রুলের শুনানি শেষ হয়। একই বছরের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ।
ওই সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একইসঙ্গে আদালত জামায়াতে ইসলামীকে আপিল করারও অনুমোদন দেন।
সেই রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর গত বছরের ১ আগস্ট অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আবেদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়। এবং গত ২৮ আগস্ট সরকার আগের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে।
এরপর আপিল বিভাগে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আবেদন করে। পরে গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য পুনরুজ্জীবিত (রিস্টোর) করে সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্যে দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার জন্য আইনি লড়াইয়ের পথ উন্মুক্ত হয়।
You might also like

সম্পাদক :মোঃ শাহজালাল
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
You cannot print contents of this website.