চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে জুলাই যোদ্ধাদের সংঘর্ষের কারণে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ফের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আপাতত শুধুমাত্র জরুরি বিভাগে সেবা পাচ্ছেন রোগীরা।
বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী দেখা শুরু হয়। সকাল পৌনে ৯টার দিকে খুলে দেওয়া হয় হাসপাতালের মূল ফটক।
তার আগেই অনেক রোগী ফটকের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। সকাল ১০টা থেকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হয়।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, “আজ কেবল জরুরি বিভাগের সেবা চালু হয়েছে। যাদের অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন, আপাতত তা দেওয়া সম্ভব নয়। আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করতে হবে। চিকিৎসকদের উপস্থিতিও এখনো নিশ্চিত নয়।”
হাসপাতালে অপেক্ষায় রোগীদের বেশিরভাগই নতুন। কেউ কেউ পুরোনো রোগী হিসেবে আবার এসেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শুরু হওয়ায় তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
বগুড়া থেকে আসা রোগী হাসান মাহমুদ বলেন, “গত জানুয়ারিতে এখানে চশমার পরামর্শ নিয়েছিলাম। এখন চোখে ঝাপসা দেখছি, তাই আবার এসেছি। সামনে ঈদ, কিন্তু চোখের সমস্যায় আর বসে থাকতে পারছিলাম না।”
নরসিংদী থেকে আসা রোগী ফারজানা ইয়াসমিন জানান, “আমার বাবার অপারেশনের তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার। ঢাকায় এসে শুনি হাসপাতাল বন্ধ। এরপর প্রতিদিন এসে খোঁজ নিয়েছি। আজ শুনে খুব স্বস্তি লাগছে যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে।”
গত ২৮ মে হাসপাতালের ভর্তি রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বহির্বিভাগে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ১৫ জন জুলাই যোদ্ধা ও চিকিৎসক-কর্মচারীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে ২৫ মে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন চারজন রোগী হাসপাতালেই বিষপান করেন। এরপর অভ্যন্তরীণ বাগবিতণ্ডা থেকে উত্তেজনা ছড়ায়, পরে ২৭ মে পরিচালকের কক্ষে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়।
এই ঘটনার পরদিন থেকেই চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ হয়ে যায়, স্থগিত হয় নিয়মিত অস্ত্রোপচার।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১ মে দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আহতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনায় জরুরি বিভাগ চালুর বিষয়ে সমঝোতা হয়।
বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, “বুধবার থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে। চারটি প্রতিষ্ঠানের চক্ষুবিশেষজ্ঞরা আহতদের পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, কে কোথায় চিকিৎসা নেবেন।”