বোনাস দিলেও বেতন দেয়নি বেশিরভাগ পোশাক কারখানা: শিল্প পুলিশ

2

কথা ছিল মে মাসের মধ্যে বোনাস আর ঈদের ছুটির আগে পোশাক কারখানাগুলোর বেতন পরিশোধ করা হবে। কিন্তু শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, বুধবার পর্যন্ত ৮৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়েছে। আর বেতন পরিশোধ করেছে মাত্র ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ কারখানা।

- Advertisement -

- Advertisement -

বুধবার রাতে শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, বস্ত্র শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএভুক্ত এবং বেপজায় অবস্থিত মোট ২ হাজার ৮৮৮টি কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৪১৭টি কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে, শতকরা হিসেবে যা ৮৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ ।

এখনো ঈদ বোনাস পাননি ৪৭১টি কারখানার শ্রমিকেরা। একইভাবে এই ২ হাজার ৮৮৮টি কারখানার মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫১টি কারখানা মে মাসের বেতন পরিশোধ করেছে, যা শতকরা হিসেবে ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

১ হাজার ৮৩৭টি কারখানার শ্রমিকরা এখনো বেতন পাননি। শতকরা হিসেবে বেতন বকেয়া রয়েছে ৬৩ দশমিক ৬১ শতাংশ কারখানায়।

সরকারের পক্ষ থেকে আগেই মে মাসের মধ্যে ঈদ বোনাস ও জুনের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করে দিতে বলা হয়েছিল।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গত ১৯ মে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এখানে গার্মেন্টসের প্রতিনিধিরা ছিল। তাদের বলা হয়েছে, তারা মে মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বোনাস দিয়ে দেবেন। আর জুন মাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে বেতন দেবেন।

তবে শিল্প পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি কারখানা মালিকরা।

শিল্প পুলিশের হিসাব বলছে, বেতন-বোনাস পরিশোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেপজার অধীনে থাকা ৪৩১টি কারখানা।

এসব কারখানার মধ্যে ৪২৪টি বোনাস পরিশোধ করেছে; আর বেতন দিয়েছে ৩৬১ টি কারখানা।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন বা বিটিএমএর সদস্য কারখানাগুলো।

বিটিএমএভুক্ত ৩৩০টি কারখানার মধ্যে ২৫২টি ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। আর বেতন হয়েছে মোটে ৪৩টিতে। এখনো বকেয়া রয়েছে ২৮৭টি কারখানার বেতন।

সবচেয়ে বেশি সদস্য রয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ)। শিল্প পুলিশের হিসাবে, বিজিএমইএভুক্ত ১ হাজার ৫৪৭টি কারখানার মধ্যে বোনাস দিয়েছে ১ হাজার ২৮৪টি। আর বেতন দিয়েছে ৫৬৫টি কারখানা। এখনো ৯৮২টি কারখানায় বেতন হয়নি।

আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ম্যানুফাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিকেএমইএভুক্ত ৫৮০টি কারখানার মধ্যে বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ৪৫৭টিতে; বেতন হয়েছে মোটে ৮২টিতে। এখনো বিকেএমইএভুক্ত ৪৯৮টি কারখানায় বেতন বাকি রয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বলেন, এখনো অনেক কারখানার শ্রমিকরা বোনাসটাই পাননি। বেতন হয়নি বেশিরভাগ কারখানায়।

“সাভারের বসুন্ধরা গার্মেন্টসের ওয়ার্কাররা এখনো শ্রম ভবন ও বিজিএমইএর সামনে অবস্থান নিয়ে আছে। তাদের ওয়ার্কারদের এপ্রিল ও মে মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাস বাকি। মালিককে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ডেকে নিয়েছিল। শ্রমিকদের টাকা দেওয়ার শর্তে মালিক ছাড়া পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। আর শ্রমিকরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।”

বাবুল আক্তার বলেন, বেশিরভাগ কারখানাতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক ঈদের বোনাস পান না, কারণ শ্রমআইন অনুযায়ী, চাকরির বয়স এক বছর না হলে ঈদ বোনাস প্রাপ্য হয় না।

“আর আমদের এই খাতের শ্রমিকদের ঘন ঘন কর্মস্থল বদল হয়। তাই কারখানাগুলোতে সবসময়ই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক থাকেন যাদের চাকরির বয়স এক বছর হয়নি। ফলে অন্তত ২০ শতাংশ শ্রমিক সবসময়ই বোনাসের বাইরে থাকে। তবে কালকে লাস্ট ওয়ার্কিং ডে, কালকে (বৃহস্পতিবার) বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা।”

You might also like