একটা সময় মনে হচ্ছিল, এটা কোনো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নয়—বরং সিনেমার স্ক্রিপ্টে লেখা কোনো রুদ্ধশ্বাস ক্লাইম্যাক্স। যেখানে শেষ বলতে কিছু নেই, আছে শুধু টানটান উত্তেজনার পর একের পর এক মোচড়। এমনই অবিশ্বাস্য নাটকীয়তা উপহার দিল নেদারল্যান্ডস ও নেপালের মধ্যকার ম্যাচটি।
স্কটল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের এক নিরাসক্ত বিকেলে। ইতিহাসে প্রথমবার, এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দেখা গেল টানা তিনটি সুপার ওভার!
ম্যাচ শুরু হয়েছিল অনেকটাই সাধারণ ছকে। গ্লাসগোর উইকেটে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে নেদারল্যান্ডস ১৫২ রান তোলে। রানটা আহামরি না হলেও লড়াকু। কিন্তু সেই রানকেই ইতিহাসের পাতায় নিয়ে যাবে, তা তখন কেউ কল্পনাও করেনি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় নেপাল। কিন্তু শেষ ওভারে বাজি ধরেন দুই অপরিচিত সৈনিক—নন্দন যাদব ও সন্দ্বীপ লামিছানে। তাদের হাতে তখনও প্রয়োজন ১৬ রান, বোলিংয়ে কাইল ক্লেইন। আর এখানেই রচিত হয় নাটকের প্রথম অঙ্ক।
দুই ব্যাটারের সাহসী ব্যাটিংয়ে মিলে যায় ঠিক ১৬ রান, ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। উত্তেজনার সূচনা মাত্র। প্রথম সুপার ওভারে নেপালের পক্ষে কুশল ভুর্তেল যেন হয়ে উঠলেন একক সৈনিক।
ড্যানিয়েল ডোরামের বিরুদ্ধে এক ওভারে হাঁকালেন দুই ছক্কা ও এক চার—মোট ১৯ রান। অনেক দলের জন্যই এটা যথেষ্ট। কিন্তু না, লেভিট ও ও’ডাউড তখনো চুপ করে বসে ছিলেন না।
ডাচ ব্যাটাররা যেন ছকে ফেলেছিলেন জবাব, বলতেই বলতেই তুলে ফেলেন ১৯ রান। খেলা এবার দ্বিতীয় সুপার ওভারে।
এবার ব্যাট হাতে নেদারল্যান্ডস। লেভিট আবারও ঝড় তোলেন প্রথম বলে ছক্কা মেরে। শেষে ও’ডাউডের ব্যাটে ছয় ও চার মিলিয়ে স্কোরটা থামে ১৭ রানে। মনে হচ্ছিল এবার বুঝি গল্পটা শেষ।
কিন্তু নেপালের দীপেন্দ্র সিং এয়ারি অন্য ভাবনায় ছিলেন। রোহিত পৌডেল ছক্কা হাঁকানোর পর চাপে পড়া ওভারে দীপেন্দ্র চার মারেন। শেষ বলে দরকার ছিল ৭ রান, তিনি হাঁকালেন বিশাল এক ছক্কা! কিন্তু না, সেটিও যথেষ্ট নয়—আবারও সমতা, এবার গল্প চলে তৃতীয় সুপার ওভারে।
তৃতীয় অঙ্ক যেন টুইস্টে ঠাসা। এবার নাট্যকারের কলমে রহস্য। বল হাতে জ্যাক লায়ন-ক্যাশ, তার অফস্পিনে কাঁপতে থাকে নেপালের ব্যাটাররা। প্রথম দুই বলেই তুলে নেন রোহিত পৌডেল ও অভিষিক্ত রুপেশ সিংকে। চাপ এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে, পুরো ওভারেই নেপালের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় না একটিও রান।
ইতিহাসের পাতায় লেখা হয় একটি বিরল ঘটনা—সুপার ওভারে শূন্য রানে অলআউট!
ডাচদের দরকার মাত্র ১ রান। আর ম্যাচের সেই শেষ বল যেন সিনেমার শেষ দৃশ্য। সন্দ্বীপ লামিচানে বল হাতে এলেও, লেভিট তার প্রথম বলেই লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের সমাপ্তি টানেন।