আন্দোলন ছেড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। না হলে সরকার কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
রবিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সকল কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সকল শ্রেণির চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘অত্যাবশকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা করা হলে ওই খাতে ধর্মঘট, কর্মবিরতি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে বিধিনিষেধ থাকে।
গত ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি আলাদা বিভাগ তৈরির অধ্যাদেশ জারি হলে সংস্থাটির কর্মীরা প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন। এরপর ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় সেই অধ্যাদেশ অকার্যকর ঘোষণা করলে কর্মীরা কাজে ফেরেন। তবে তারা এনবিআর চেয়ারম্যানকে ২৯ মের মধ্যে অপসারণের দাবি জানান।
সেই সময়সীমা পার হওয়ার পর তারা চেয়ারম্যানকে এনবিআরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে গত ২২ জুন আন্দোলনে থাকা পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং নতুন করে কর্মবিরতি ও আন্দোলন শুরু করেন।
বুধবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তাদের আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে অপসারণ করা না হলে শনিবার ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলার ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার সারাদেশের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এছাড়া ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিও পালন করা হয়।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হলো আমাদের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি।”
“এ প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সকল অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এনবিআরের আন্দোলনে নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সরকার বলছেন, “গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নজিরবিহীনভাবে গত দুই মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।”
“সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ দুই মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তারা তা অগ্রাহ্য করে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তারা আন্দোলনের নামে
সরকার বলছে, “আমরা আশা করি, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।”