টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উপকূলীয় জনজীবন

2

চার দিনের টানা বৃষ্টিতে উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। সোমবার ভোর থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। মঙ্গলবারও দিনভর বৃষ্টি ছিল। জীবন ও জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ঘর থেকে বের হয়েছেন মানুষ। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিক ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে খুলনার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মহানগরীর টুটপাড়া, রয়েল মোড়, মিস্ত্রিপাড়া, আহসান আহমেদ রোডসহ বিভিন্ন সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে নগরীতে চলাচলকারী কর্মজীবী মানুষ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

- Advertisement -

- Advertisement -

সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে উত্তাল বঙ্গোপসাগরে ঢেউ আছড়ে পড়ায় শনিবার ভোর থেকে সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী, সুপতি, দুবলাসহ বাগেরহাটের শরণখোলা, রাজৈর, মোংলা, সুন্দরবন উপকূলের মৎস্য বন্দরগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে শত শত ফিশিং ট্রলার। পুনরায় ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এসব ফিশিং ট্রলারকে সাগরে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘সোমবার খুলনায় ৯০ মিলিমিটার এবং মঙ্গলবার একদিনে একশ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার বিকাল ৩টা সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার কয়রায় ৪২ মিমি এবং মোংলায় ২৮ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রবিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কয়রায় ১৬ মিমি আর মোংলায় ৪২.৮ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। সাগরের লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হচ্ছে।’

সোমবার দিন ও রাতভর বৃষ্টির পর মঙ্গলবার সকাল থেকে মেঘে ঢেকে ছিল মহানগরী খুলনা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর দুপুর গড়ানোর পরে আরও ঘনীভূত হয় মেঘ। বৃষ্টিতে রয়েল মোড়, পিটিআই মোড়, ময়লাপোতা, সাত-রাস্তাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

মডার্ন ফার্নিচার মোড়ের বাসিন্দা রিয়াজ হোসেন বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করা, বৃষ্টি মৌসুমের আগে রাস্তা মেরামত না করাসহ নানান কারণে হালকা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের।’

কেবল প্রবল বৃষ্টিতে না, বরং সামান্য বৃষ্টিতেও খুলনার রয়েল মোড়সহ নানান জায়গায় এই দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি সহজেই লক্ষণীয়। কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত স্থায়ীভাবে পদক্ষেপ না নেবে, ততক্ষণ নগরবাসীর ভোগান্তি অব্যাহত থাকবে। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় জনতা।

কয়রা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে গত তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু সোমবার ভোর থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেও নিম্ন আয়ের মানুষেরা তাদের কাজে বের হন। দোকানপাটসহ হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলোতে মানুষের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। অনেকেই দোকান খুলে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

এদিকে, শনিবার থেকে থেমে থেমে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত ৭টি জাহাজে পণ্য ওঠানামা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মো. মাকরুজ্জামান।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে টিকতে না পেরে শনিবার ভোর থেকে কয়েক শ’ ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী, সুপতি, দুবলার বিভিন্ন খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় টানা ভারী বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকের কাঁচা ফসল ও মাছের ঘেরের।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাকা ও কাঁচা রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে আছে। অনেক দোকানপাট, বাজার ও বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ‘আরও দুই দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

টানা বৃষ্টির কারণে তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া, খেশরা, জালালপুর, মাগুরা, খলিশখালী, খলিলনগর, ইসলামকাটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমন ধানের বীজতলা, সবজি ক্ষেত, মাছের ঘের, পুকুর, কাঁচা রাস্তা ও নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এবারও অতি বৃষ্টির কারণে তালাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি নানা প্রকল্পে কালভার্টগুলো সচল রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবে অধিকাংশ কালভার্ট বন্ধ থাকে। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমিটি ও উত্তরণের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শালতা নদী খনন, খাস খালগুলো উন্মুক্ত রাখা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্মুক্ত রাখার কথা বলা হলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এ বছরও উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।’

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, আমাদের ইউনিয়নের অন্তত সাতটি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।’

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে এবং কাঁচা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে।’

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার বলেন, ‘‌‌‌‌জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই আলোচনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

You might also like