দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের এসইএআরও’র আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুল গত ১১ জুলাই থেকে ছুটিতে গেছেন।
সায়মা ওয়াজেদ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকাকালীন সময়েই তিনি এ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদে আসীন হন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরস আধানম গেব্রিয়েসাস সংস্থার কর্মীদের পাঠানো এক ই-মেইলে জানান, সায়মা ওয়াজেদের অনুপস্থিতিতে সহকারী মহাপরিচালক ড. ক্যাথারিনা বেহমে তার দায়িত্ব পালন করবেন।
ড. ক্যাথারিনা ১৫ জুলাই ভারতে অবস্থিত সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় কার্যালয়ে যোগ দেবেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পুতুলের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা করেছে।
অভিযোগে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পেতে তিনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এমনকি জাল কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন, যা বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারা লঙ্ঘন করে।
দুদক আরও জানায়, সায়মা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ) একটি সম্মানসূচক পদে আছেন বলে দাবি করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে।
তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজের পরিচালিত সুচনা ফাউন্ডেশনের জন্য প্রায় ২৮ লাখ ডলার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংগ্রহ করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা (প্রতারণা) ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এই মামলার পর থেকে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন অঞ্চলগুলোতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছেন না। কারণ বাংলাদেশে ফিরলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি রয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সায়েমা দায়িত্ব নেওয়ার আগেই অভিযোগ উঠেছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে এই পদে বসাতে যাচ্ছেন।
এই অভিযোগ ওঠার পর ২০২৩ সালের আগস্টে সায়মা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তারপর থেকেই তাকে দেশে দেখা যায়নি।
সায়মা ওয়াজেদের নিয়োগ শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ একটি সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে তাকে অযোগ্য ও স্বজনপ্রীতির ফলাফল হিসেবে উল্লেখ করেছিল।
ল্যানসেট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল, “এই নিয়োগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যতের আঞ্চলিক পরিচালকদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এতে সংস্থাটির নেতৃত্বের ওপর আস্থা দুর্বল হয়েছে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় তার সিভি খুব দুর্বল। অর্থাৎ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিল অপ্রতুল। তার নিয়োগকে নেপোটিজম বা স্বজনপ্রীতি বলেও উল্লেখ করা হয়।