নির্বাচন সম্ভব, আইনশৃঙ্খলা সমস্যা নয়: সিইসি

2

জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখলেও সিইসির মতে, নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

- Advertisement -

- Advertisement -

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসির উদ্দীন জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো আনুষ্ঠানিক তারিখ জানানো হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারির আগে বা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে, এমন ধারণা আমরা গণমাধ্যম থেকে পেয়েছেন তারা।

সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পরে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিল ধরে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, “চ্যালেঞ্জিং হবে, কিন্তু অসম্ভব নয়। জনগণ যদি নির্বাচনের পক্ষে থাকে, তাহলে মব ভায়োলেন্স বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকানো সম্ভব।”

তিনি বলেন, “আমরা সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা বা সময়সীমা পাইনি। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

“আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো গাইডেন্সও নাই, পরামর্শও নাই, আদেশও নাই, নির্দেশও নাই, নাথিং। আমরা অ্যাবসোলিউটলি ইন্ডিপেনডেন্টলি এই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

কিছুদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার। কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার জন্য আমি যাইনি। আমি প্রেসে বলেছিলাম, সৌজন্য সাক্ষাৎ অর্থ এই নয় যে সালাম দিয়ে বসে থাকলাম ৪৫ মিনিট। তারপর আবার চলে আসলাম ওয়ালাইকুম আস সালাম দিয়ে। ইট ডাজ নট মিন দ্যাট।

“অভিয়াসলি, উনি হেড অব দ্য গভমেন্ট, উনার জন্য একটা নির্বাচন সামনে আছে, যে নির্বাচনটা আমাকে ডেলিভার করতে হবে, ইসিকে ডেলিভার করতে হবে। অভিয়াসলি, নির্বাচনটা আলোচনার মধ্যে এসে গেছে। শুধু উনি জানতে চেয়েছেন যে আমাদের প্রিপারেশনের অবস্থা কী, স্ট্যাটাসটা কী, আমরা কতদূর এগিয়েছি, প্রস্তুত কী রকম।

“উনি জানতে চেয়েছিলেন, আমি উনাকে ডিটেইল জানিয়েছি আমি কী কী করেছি, কী কী করতেছি, কী কী বাকি আছে বা আমাদের টাইমলাইনটা কী, কখন আমরা শেষ করতে পারব। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কিত একটা ব্রিফ (ধারণা) ওনাকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) আমি দিয়েছি। কারণ এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, “এটা নিউট্রাল গভমেন্ট। আমিও নিউট্রাল। পলিটিক্যাল গভমেন্ট যখন পাওয়ারে থাকে, তখন হেড অব দ্য গর্ভমেন্টের আন্ডারে একটা দল থাকে। অভিয়াসলি চিফ ইলেকশন কমিশন যখন দেখা করবে, এটা একটা কোয়েশ্চেনাবেল। কারণ উনি তো একটা দলের নেতৃত্বে আছেন। তখন একটা পার্টিকুলার দল বেনিফিট পেতে পারে। এজন্য সাধারণত ডিসকারেজ করা হয়।

“কিন্তু এখন বাংলাদেশে যে সিচুয়েশন, তাতে সরকার প্রধানের নিজস্ব কোনো দল নাই। উনি কোনো দলের পক্ষের নয়। সুতরাং এখানে আমিও নির্দলীয়ভাবে কাজ করব। উনিও নির্দলীয়। আমি মনে করলাম এখানে কোনো অসুবিধা থাকার কথা না।”

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত জানিয়ে নাসির উদ্দীন বলেন, “যদি হয় আমাদের তরফ থেকে আমরা প্রস্তুত। আমরা ওভাবে করতে চাই, উনারা যে তারিখে পোলিং ডেট চান, যেদিন ভোট হয়, সেদিন যাতে আমরা একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দিতে পারি, সেই লক্ষ্যেই আমরা প্রস্তুতিটা নিচ্ছি।

নির্বাচন করার মতো পরিবেশ এখনো হয়নি বলে বিভিন্ন দলের দাবি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “অ্যাকচুয়ালি রাজনীবিদদের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা গাইডেড না। রাজনীতিকরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। কোনো কোনো দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলে, পরে আবার ব্যাক ট্র্যাক করে বলছে যে সংস্কারের আগে ভোট হতে পারবে না। নানা ধরনের কথা বলে। এইটা হলো রাজনৈতিক বক্তব্য।”

বিচারকের মতো কাজ করতে চান

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, “আমি কাউকে সুবিধা দিতে আসিনি। সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি।

“যেদিন আমি শপথ নিয়েছি সেদিনই আমি কমিট করেছি, সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি। এমনকি আমার অফিসে যারা কাজ করেন, গত দোসরা মার্চ প্রথম রোজায় ভোটার দিবসে সবাইকে হাত তুলে শপথ করিয়েছি যে- আপনারা সবাই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, এমন ওয়াদা আমাকে দেন। পহেলা রমজান অধিকাংশ রোজাদার হাত তুলে শপথ করেছে।

“সুতরাং ইসি নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে, ওই রাজনৈতিক বক্তব্য এগেইন দিতে পারে। সময়ের বিবর্তনে যখন দেখবে আমরা কাজ করছি নিরপেক্ষভাবে, আস্তে আস্তে যখন আমাদের কাজকর্ম আরও সম্প্রসারিত হবে, তারা রিঅ্যালাইজ করবে যে না- এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আছে। তাদের আস্থা আমাদের ওপর আসবে।”

বিএনপি বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, “কে কী বলছে সেটা রাজনৈতিক বক্তব্য। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের কর্মকাণ্ড দেখে একসময় সবাই বুঝবে আমরা নিরপেক্ষ।

“আমি তো বিএনপির সদস্যও না, কোনো নেতাও না। কারও প্রতি আমাদের যে দুর্বলতা আছে, এটা বলতে পারে পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট তো দিতেই পারে। আপনি তো এটা শুনছেন, অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে। একেকজন একেকটা বলে। এগুলো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট। আমি এগুলোকে সেভাবে দেখি। উনারা বলতেই পারে। উনাদের তো বলার অধিকার আছে, বলবেই। আমাদের কাজকর্ম দেখে উনারা এক পর্যায়ে বুঝে যাবে যে এখান থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়।

“আমি ওই চেয়ারটাকে (সিইসির চেয়ার) একটা বিচারকের আসন মনে করি। সুতরাং আমার হাত দিয়ে যেন অবিচার না হয়। আমি সবার জন্য যেন সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারি, বিচারকের মতো করেই আমি এই কাজটা করতে চাই।”

শাপলা প্রতীক কেউ পাবে না

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যাচাই চলছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। প্রায় ১৫০টি দল আবেদন করেছে। এর মধ্যে এনসিপি শাপলা প্রতীক চাইলেও তা দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়।

সিইসি বলেন, “শাপলা জাতীয় ফুল হওয়ায় প্রতীক হিসেবে তা বিতর্কিত হতে পারে। নাগরিক ঐক্যও এটি চেয়েছিল। তবে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, কাউকেই শাপলা প্রতীক দেওয়া হবে না।”

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ থাকলেও নির্বাচন হবে

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকার বিষয়ে সিইসি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত বিচারিক নিষেধাজ্ঞা চলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে না। তবে তাদের সমর্থকরা ভোট দিতে পারবেন। এতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না—এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবুও নির্বাচন হবে।”

স্থানীয় নির্বাচন নয়, লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচন

স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখনই না করার পক্ষে নির্বাচন কমিশন। সিইসি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখন স্থানীয় ভোটে যাওয়ার সময় নেই। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেও স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে কিছু বলা হয়নি।’

You might also like