৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট দেখেনি , বললেন এ কে আজাদ
তাড়াতাড়ি করে লবিস্ট নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ শুরু করা হয়েছে , এখন লবিস্ট নিয়োগ করে কত দূর কী করা যাবে, তা আমাদের জানা নাই
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িদের একজন এ কে আজাদ । ছিলেন দেশের ব্যবসায়িদের প্রধান চেম্বার এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট । আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে গিয়েছিলেন জাতীয় সংসদে । নিজের চেষ্টায় ফরিদপুরের সন্তান এ কে আজাদ নিজের উদ্যোগে সফল হয়েছেন ব্যবসায়, গড়ে তুলেছেন রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপ । উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন চ্যানেল-২৪ টেলিভিশন এবং দৈনিক সমকাল । আজ রবিবার প্রথম আলো আয়োজিত গোল টেবিল আলোচনায় ছুড়েছেন শব্দ বোমা। ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলেছেন “ ৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট কখনো দেখেনি। আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। ”
বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য সংকট যে মার্কিণ শুল্ক , সে সম্পর্কে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করেছিল দৈনিক প্রথম আলো। সেখানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নিয়েছেন।
গোলটেবিল আলোচনায় সম্প্রতি এক ব্র্যান্ড অংশীদারের সঙ্গে বৈঠকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ বলেন, ‘আমার এক বড় ব্র্যান্ড হেড অফিসে ডেকে জানায়, তারা নিজ দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। তাদের ভাষ্য ছিল—তোমাদের অবস্থান দুর্বল, ভালো ফল আশা করা যাচ্ছে না।’ এটা শুনে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন।
এই পরিস্থিতিতে এ কে আজাদ একাধিক উপদেষ্টাকে ফোন করেন। তিনি বলেন, সবাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। পরদিন বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ কে আজাদ আরও বলেন, উপদেষ্টা জানান, ৯৫ শতাংশ সমস্যা তাঁরা সমাধান করেছেন। বাকি ৫ শতাংশ নিয়ে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা কী করবেন। তাঁর যুক্তি—যদি ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব কমও আসে, কিন্তু ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত রপ্তানি হলে দেশের লাভই বেশি হবে। এই উদ্যোগে তিনি সফল হবেন বলে মনে করেন।
এই পরিস্থিতিতে এ কে আজাদ ক্রেতাদের অবস্থান তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমার এক ক্রেতা ই–মেইলে জানান, ১ তারিখ থেকে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্ক বসবে, তা সরানো না গেলে শুল্কের ৩৫ শতাংশ আমাকে বহন করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, আমি সেই শুল্ক কীভাবে বহন করব।’
বক্তব্যে ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমার ইন্দোনেশিয়ায় এক যৌথ উদ্যোগ আছে। সেখানে সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করছেন। লবিস্ট নিয়োগ করেছেন, প্রতিটি স্তরে আলোচনা করেছেন। অথচ বাংলাদেশে আমরা এমন সুযোগ পাইনি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে এ কে আজাদ বলেন, ‘আপনারা বলছেন, সাত-আট মাসের জন্য দায়িত্বে আছেন। এরপর চলে যাবেন। কিন্তু তখন আমরা যাব কোথায়? আমাদের কার কাছে ফেলে রাখছেন।’
এ কে আজাদ বলেন, ‘সবার ধারণা, আমাদের মাথার ওপর একজন আছেন। তিনি এটা ফুঁ দিয়ে দেবেন আর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যার জন্য আমাদের কোনোরকম মূল্যায়ন করা হচ্ছে না; কোনো লবিস্ট নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে না।’
গতকাল শনিবার সরকার থেকে জানানো হয়েছে, ইউএসটিআর বা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর শুল্ক নির্ধারণ করবে না, করবে ট্রাম্প প্রশাসন। সরকারের উদ্দেশে এ কে আজাদ বলেন, ‘আপনারা যদি পারেন, ওই পর্যায়ে কিছু চেষ্টা করেন।’
সরকার বলেছে, তাড়াতাড়ি করে লবিস্ট নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এ কে আজাদ বলেন, ‘এখন লবিস্ট নিয়োগ করে কত দূর কী করা যাবে, তা আমাদের জানা নাই। বাংলাদেশ এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’