নববর্ষে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার

19

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ যেন আমরা হাতছাড়া না করি।” তিনি বলেন, এবারের নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার হোক— বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া।

- Advertisement -

- Advertisement -

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক শুভেচ্ছাবার্তায় অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “পহেলা বৈশাখ সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আজ সবাইকে আপন করে নেয়ার দিন। এই নববর্ষ শুধু আরেকটি বছর নয়, এটি নতুন বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। আসুন, আমরা বিগত বছরগুলোর গ্লানি, দুঃখ, বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে পেছনে ফেলে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।”

নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। চলুন, সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা গড়ে তুলি একটি সমান সুযোগে ভরা, মানবিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ।”

বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শুধু নিজেদের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে হবে। বাংলা নববর্ষের দিনটি আমাদের সেই সুযোগ এনে দেয়— আমরা আমাদের ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে উৎসবমুখর পরিবেশে তুলে ধরতে পারি, পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে পারি।”

পহেলা বৈশাখকে ‘বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসব’ আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর যেখানে যেখানে বাঙালিরা আছেন, আজ তাদের সকলের জন্য আনন্দের দিন, বর্ষবরণের দিন।”

‘ফসলি সন’-এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলা সাল গণনার সূচনা হয়েছিল কৃষিকাজের সুবিধার্থে— ‘ফসলি সন’ হিসেবে। আজও দেশের কৃষকরা বাংলা তারিখ মেনে বীজ বোনেন, ফসল কাটেন। এটা আমাদের মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত এক গভীর ঐতিহ্য।”

বাংলা নববর্ষের এক অনন্য অংশ ‘হালখাতা’-র কথা স্মরণ করে ইউনূস বলেন, “এই আধুনিক সময়েও হালখাতার ঐতিহ্য আমরা ধরে রেখেছি। দেশের হাটে-বাজারে, শহরে-বন্দরে আজও নববর্ষ উপলক্ষে দোকানিরা তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে নতুনভাবে শুরু করেন।”

তিনি বলেন, “বৈশাখী মেলাকে ঘিরে দেশের জেলায় জেলায় উদ্যোক্তারা নিজেদের সৃজনশীলতা তুলে ধরেন। শীতল পাটি, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, হাতপাখা— সবকিছুতে উঠে আসে বাংলার প্রাণের প্রকাশ।”

সমতলের ও পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উৎসব উদযাপন নিয়েও ইউনূস বলেন, “এবারের চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বড় পরিসরে উৎসবে অংশ নিয়েছে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও ঋদ্ধ করেছে।”

শেষে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের সকলের জন্য শুভদিনের সূচনা করুক। এটি হয়ে উঠুক নতুন ও গভীর আনন্দের উন্মোচনের প্রতীক।”

তিনি নববর্ষের সকল আয়োজন ও উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন।

You might also like