মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের রিভিউ শুনানি পিছিয়ে ৬ মে দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
ওইদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। ৬ মে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় শীষে আজহারের রিভিউ থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রিভিউ থেকে আপিল শুনানি করার ঘটনা এটিই প্রথম।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে বলা হয়। আর রিভিউ শুনানির জন্য ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন সর্বোচ্চ আদালত।
রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে জামায়াত নেতা আজহারুলের করা আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে এই আদেশ দিয়েছিলেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ও গতকাল সোমবার শুনানি হয়।
আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও সৈয়দ মো. রায়হান উদ্দিন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
শুনানির পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দীক বলেন, আজকে চারটি গ্রাউন্ডে এ টি এম আজহারুল ইসলামের রিভিউ অ্যাপ্লিকেশনটি অ্যালাউ হয়ে লিভ গ্রান্ড (মঞ্জুর) করেছে আপিল বিভাগ। আগামী ২২ এপ্রিল মূল আপিলটির ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
প্রথম গ্রাউন্ড হচ্ছে- আপিল বিভাগ ২০১৯ সালে আদালত যে রায় দিয়েছিলেন সেখানে ওনারা ইন্টারন্যাশনাল ল মানেন নাই। এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট-১৯৭৩ সালের আইনে ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যাপ্লাই করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের আইনে ইন্টারন্যানল ল কমপ্লাই করার কথা ছিল কিন্তু সেটা তারা মানেন নাই। এই মূল গ্রাউন্ডে রিভিউ অ্যালাউ হয়েছে।
দ্বিতীয় গ্রাউন্ড হচ্ছে- ওনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট-১৯৭৩ এর আইন উদ্দেশ্যেমূলকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সেই আইনে স্পষ্ট বলা আছে- আন্তর্জাতিক আইন মেনে রায় দিতে হবে, কিন্তু ওনারা সেটা মানেননি এবং ওনারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা আন্তর্জাতিক আইন বিরুদ্ধে ছিল। এই গ্রাউন্ডেও রিভিউ অ্যাপ্লিকেশনটি অ্যালাউ হয়েছে।
তৃতীয়ত: স্পেকচ্যুয়াল পয়েন্ট- মামলার সাক্ষী ঘটনার সময় আসামিকে অনেক দূর থেকে দেখেছেন, তিন কিলোমিটার দূর থেকে, পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে চিহ্নিত করেছেন, যা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
চতুর্থত: অ্যাভিডেন্সগত বিষয়- একজন সাক্ষী দিয়ে বলেছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম আমার ক্লাসমেট ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি আজহারুল ইসলামের ক্লাসমেট ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, আমরা মামলার পুরো প্রক্রিয়াটাকে চ্যালেঞ্জ করেছি। আমরা বলেছি, আবদুল কাদের মোল্লাকে যে রায়ের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে- তা ভুল ছিল। সেটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত যদি আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করে তাহলে আবদুল কাদের মোল্লা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যত আসামির সাজা হয়েছে, সে বিষয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে। ভুল প্রক্রিয়ায় সাজা হয়েছে কিনা সে বিষয়টিও তখন আমরা আলোচনায় নিয়ে আসতে পারব। এবং তা আদালতে উপস্থাপন করতে পারব। এসব বিষয়ে ২২ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির দণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আজহার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন। পরে আজহারুল ইসলামের করা আপিল আংশিক মঞ্জুর করে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। এর পরদিন ১৬ মার্চ আজহারের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন জামায়াতের এই নেতা।

সম্পাদক :মোঃ শাহজালাল
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
২০২৫ © ব্যানারনিউজবিডি কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
🚧 এই সাইটটি বর্তমানে নির্মাণাধীন 🚧
You cannot print contents of this website.