রোজার আগে থেকে ঈদের কয়েকদিন পর পর্যন্ত সবজির বাজার ছিল সহনীয় পর্যায়ে। মূলত সে সময় মৌসুমী সবজি পর্যাপ্ত থাকায় পুরো রোজার মাস জুড়ে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল বাজার।
কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবারও চড়া হচ্ছে সবজির বাজার। হাতেগোনা কয়েকটি সবজি বাদে প্রায় সব সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। এই উচ্চমূল্যই সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়িয়ে তুলছে অস্বস্তি।
সবজির বাজারে অস্বস্তি থাকলেও ব্রয়লার মুরগির মাংসের বাজারে কিন্তু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছে সাধারণ মানুষ। যদিও সামনের মে থেকে এই স্বস্তি থাকছে কি না, তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা বাজারের এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্বস্তি নেই সবজির বাজারে
কয়েকটি বাদে আজ বাজারে প্রায় সব সবজির দাম রয়েছে ৮০ টাকার ওপরে। যা ক্রেতাদের উপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের জন্য। আর এই উচ্চমূল্যের মধ্যেও বেড়েছে বেশ কিছু সবজির দাম।
আজ বাজারে টক টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া দেশি গাজর ৫০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৬০ (হাইব্রিড) -১২০ (দেশি) টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, কাকরোল ১২০ টাকা, পেপে ৮০ টাকা, শালগম ৮০ -১০০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, সজনে ডাটা ১৬০ টাকা, হাইব্রিড পটল ৭০, দেশি পটল ১৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা ও ধনেপাতা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সেঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আজ প্রতি কেজিতে শিমের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, সাদা গোল বেগুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, কালো গোল বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, হাইব্রিড শসার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, পেঁপের দাম বেড়েছে ১০ টাকা, সজনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, দেশি পটলের দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, কচুরমুখীর দাম বেড়েছে ২০ টাকা এবং প্রতি পিসে বাঁধাকপির দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। আর শুধু মুলার দাম আজ কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকা নিয়ে বিক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, এই ঋতুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার একটা মূল কারণ। এছাড়াও এখন যে সময়টা চলছে, সেটা হচ্ছে নতুন সিজনের সবজি আসতে শুরু করেছে আবার আগের সিজনের সবজি শেষ হচ্ছে। এরকম সময়ে সবজির দাম সাধারণত বাড়তিই থাকে। নতুন সবজি বেশি করে আসা শুরু করলে দাম কমে যাবে। তবে যদি সামনে বৃষ্টি না হয় বা অনেক বেশি হয় তখন কিন্তু আর দাম কমবে না।
এদিকে বাজার করতে আসা আবুল হাসনাত বলেন, পুরো রোজার মাস আমরা বেশ শান্তিতেই পার করেছি। সবজিসহ আলু-পেঁয়াজ সবকিছুর দাম নাগালেই ছিল। কিন্তু এখন যে হারে বেড়ে যাচ্ছে সবকিছুর দাম এটা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যাচ্ছে।
আরেক ক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম যদি ৭০ থেকে ৮০ টাকার ওপরে হয় তাহলে আমাদের সবার জন্য, বিশেষ করে গরীব মানুষের জন্য খেয়ে-পরে বাঁচা কঠিন হয়ে যাবে। কিছুদিন আগেও আমরা আলহামদুলিল্লাহ বাজার ভালো করেই করতে পারতাম। এখন মনে হচ্ছে প্রেসার বাড়ছে।
ঊর্ধ্বমুখী আদা-রসুনের বাজার
পেঁয়াজের গেলো কয়েকদিন ধরেই রয়েছে উর্ধমুখী। একইসঙ্গে এখন বাড়ছে আদা-রসুনের দামও। তবে কমেছে আলুর দাম। আজকে বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি নতুন ক্রস পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা। এরমধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং বড় আকারের পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। এছাড়া আজ প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। আর বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজ দেশি রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, চায়না রসুন ২০০-২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০-২২০ টাকা ও ভারতীয় আদা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আজ প্রতি কেজিতে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা, চায়না রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা এবং চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০-৪০ টাকা করে। আর প্রতি কেজিতে লাল ও সাদা আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম
আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি দাম কমেছে বড় অংকে। তবে উচ্চ দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। আজ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আজকে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৫৩- ১৬৫ টাকা, কক মুরগি ২৩৮- ২৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০-৩০৫ টাকা, দেশি মুরগি ৬২০-৬৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনা করলে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ৩২-৩৫ টাকা এবং লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫ টাকা। আর দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
বি.বাড়িয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, এখন ব্রয়লার মুরগির দাম অনেকটা কমেছে। কিন্তু সামনের মাস থেকে আবার বেড়ে যেতে পারে। শুনেছি খামারিরা উৎপাদন বন্ধ করে দিবে। যদি তারা আসলেই সেটা করে, তাহলে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মাংসের সঙ্গে ডিমের দামও বেড়ে যাবে তখন। এক্ষেত্রে বেচাকেনা করতে আবার ঝামেলা হয়ে যাবে।
এদিকে আজকের বাজারে আকার, ওজন ও মান অনুযায়ী ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৩২০০ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য মাছে মধ্যে রুই মাছ ৩৫০-৬৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৫৫০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ (চাষের) ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, টাকা, চিতল মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, সরপুঁটি মাছ (চাষের) ২৫০- ৩০০ টাকা, কাজলি মাছ ১২০০-১৬০০ টাকা, বাতাসী মাছ ১২০০- ১৪০০ টাকা এবং রূপচাঁদা মাছ ৯০০-১৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।