আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ‘অবরোধ’

15

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ অবরোধের ডাক দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা (এনসিপি) হাসনাত আবদুল্লাহ।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশের ফোয়ারার সামনের মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা দেন হাসনাত।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ব না। ইন্টেরিমের কানে আমরা আমাদের দাবি পৌঁছে দিতে চাই।”
এই ঘোষণার পর মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধে উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিক্ষোভকারীরা।
গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে যমুনার সামনে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে শুরু হওয়া এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরা।
রাত পেরিয়ে দিনের বিক্ষোভ চলতে থাকার মধ্যে দুপুরে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি আসে। সেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে জানিয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়।
সরকারের বিবৃবিতে বলা হয়, “সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে।”
“এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।”
বুধবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরব হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন পক্ষ।
হাসনাতের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রাত ১টার দিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি মিছিল যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
রাতে বিক্ষোভ শুরু হলে কাকরাইল মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, মিন্টো রোডের মোড় থেকে পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করে।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য যমুনার সামনে ব্যারিকেডের সামনে ও পেছনে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেন। তবে ছোট ছোট মিছিলগুলোকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর ফোয়ারার সামনে জমায়েত বাড়তে শুরু করে।
ফোয়ারার সামনে মঞ্চ তৈরির পর যমুনার সামনে থেকে সরে আসে হাসনাতসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তবে এরপরও একদল মানুষ সরে আসেনি। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম গিয়ে তাদের নিয়ে আসে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের এই জমায়েতে সকালে যোগ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এর আগে রাতে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী।
জুমার নামাজের পর বিভিন্ন ইসলামিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। জুমার নমাজের পর মঞ্চে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব তোফজ্জল হক মিয়াজি বলেন, “এই আওয়ামী লীগ মানুষের ভাত ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম করতে দেয়নি। শাপলা চত্বরে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে। আমরা শাপলা হত্যার বিচার পাইনি। আমরা শাপলা হত্যার বিচার চাই। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাই।”
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, “আমরা এখানে এক, দুই ঘণ্টা বা কয়েক রাত অবস্থানের জন্য আসিনি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আদায় না করা পর্যন্ত আমরা এই স্থান ছাড়ব না।”
তিনি বলেন, “নয় মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো আওয়ামী লীগের বিচার হয়নি। এতোদিনে এই সরকারের আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য প্রসববেদনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের এখনো কিছুই শুরু হয়নি। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করলে তাদের মা গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড আওয়ামী লীগকে কেন নিষিদ্ধ করা হয়নি?”

- Advertisement -

- Advertisement -

You might also like